আইল্যান্ড পিক জয় করলেন শায়লা

পিরোজপুর প্রতিনিধি

শায়লা পারভীন বিথী
শায়লা পারভীন বিথী। সংগৃহীত ছবি

১১ দিনের দুঃসাহসিক অভিযান শেষে এ মাসের শুরুর দিকে হিমালয়ের আইল্যান্ড পিক জয় করেছেন পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার মেয়ে শায়লা পারভীন বিথী। শায়লার এ সাফল্যে তাকে নিয়ে এখন গর্ব করছেন তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

বাংলাদেশ থেকে ২৫ অক্টোবর শুরু হয় এ পাহাড় জয়ের যাত্রা। ২৮ অক্টোবর ভোরে কাঠমান্ডু থেকে বিমানে লুকলা পৌঁছান শায়লা। সেখান থেকেই মূলত অভিযাত্রীদের ট্রেকিং শুরু হয়। পরদিন পৌঁছান নেপালের বিখ্যাত পাহাড়ি শহর নামচে বাজারে। ৭ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে আইল্যান্ড পিকের হাই ক্যাম্পে পৌঁছান শায়লা। সেখান থেকে রাত ২টা ২০ মিনিটে পর্বতচূড়ার দিকে যাত্রা শুরু করে সকালে চূড়ায় পৌঁছান বলে জানান শায়লা পারভীন বিথী।

universel cardiac hospital

শায়লা আরও জানান, সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটের দিকে চূড়ায় পৌঁছান এবং সেখান থেকে সফলভাবে নেমে আসেন। নেপালের কাঠমান্ডু থেকে রওয়ানা দিয়ে ১১ দিনে হিমালয়ের ছয় হাজার ১৬০ মিটার উঁচু এই পর্বতটি জয় করেন তিনি। দুঃসাহসিক পথযাত্রা শেষে তিনি পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। এছাড়াও তিনি ধর্ষণ এবং সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী নানা বার্তা সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও বহন করেন। অভিযানে শায়লা বিথী হিমালয়ের বিখ্যাত ‘থ্রি পাস’ পাড়ি দেন। তিনি গত ২ নভেম্বর রেঞ্জোলা পাস, ৪ নভেম্বর চোলা পাস ও ৬ নভেম্বর কংমালা পাস পাড়ি দেন।

অভিযানে বিথীর সঙ্গে একজন নেপালি শেরপা ও একজন পোর্টার ছিলেন। সর্বশেষ এ অভিযানের তত্ত্বাবধান করেছে ঢাকা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব। শায়লা প্রথম পর্বত জয় করেন ২০১৬ সালে। সে বছর তিনি হিমালয়ের ছয় হাজার ৪৭৪ মিটার উঁচু মেরা পিক জয় করেন। এরপর ২০১৮ সালে তিব্বতের সাত হাজার ৪৫ মিটার উঁচু লাকপারি পর্বত জয় করেন। ২০১৯ সালে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে হিমালয়ের দুর্গম তাশি লাপচা পাস অতিক্রম করেন শায়লা।

শায়লার পরিবার সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মৃত শেখ আবদুস সালামের বড় মেয়ে শায়লা পারভীন বিথি। জন্ম ১৯৯২ সালের ১৬ মার্চ। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বড় শায়লা ছোটবেলা থেকেই ছিলেন চঞ্চল স্বভাবের। প্রাথমিক স্তরে স্বরূপকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পরে সরকারি স্বরূপকাঠি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ধাপ শেষ করেন। এর পরই তিনি চলে যান ঢাকায়, হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে এখনও চলছে পড়াশোনা।

শায়লার ছোট বোন সামিরা ইয়াসমিন সায়মা জানান, গত বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে যথাক্রমে ছয়, সাত ও আট হাজার মিটারের তিনটি পর্বত অভিযানের ঘোষণা দেন তার বোন। এ অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য হলো, পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি পৌঁছে দেওয়া।

তিনি বলেন, এর আগেও আপু কয়েকবার পাহাড় জয় করেছেন। আপুর এই দুঃসাহসিক সাফল্যে আমি, আমার পরিবার ও শিক্ষকরা গর্বিত।

সরকারি স্বরূপকাঠি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, সে যখন আমার বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় তখন থেকে একটু চঞ্চল প্রকৃতির। আমরা শিক্ষকরা এখন শায়লাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কোনো অভিযোগ বা অসন্তুষ্টি নেই। শায়লা যখন পড়াশোনা করতো তখন আমি বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলাম। তবে সে এসএসসি পরীক্ষার পরে জেলার বাইরে থাকায় তার সাথে আমাদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। তবে তার এই অর্জনের জন্য আমরা গর্বিত এবং তার আগামীর জন্য অনেক শুভকামনা।

৩ নং স্বরুপকাঠী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি চেয়ারম্যান মো. আল আমিন জানান, নেছারাবাদ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের আব্দুস সালাম ভাইয়ের মেয়ে শায়লা। প্রতিনিয়তই নারীরা এমন অর্জনের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী অগ্রযাত্রার এই ধারাকে আমি স্বাগত জানাই। ফেসবুকসহ বিভিন্ন স্থানে শায়লার এই বিষয়টি আমি দেখেছি ও স্থানীয় এবং পরিবার সূত্রে শুনেছি। তার এ কার্যক্রমকে আমি আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই।

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোশারেফ হোসেন জানান, আমি বিষয়টি সম্পর্কে শুনেছি। শায়লা বিথী আমাদের এই নেছারাবাদ উপজেলার মেয়ে। এখন নারী ক্ষমতায়ন যেভাবে হচ্ছে তাতে নারীরা পিছিয়ে নেই। আগে যেখানে নারীর অবদান ও সাফল্য ঘরের ভেতরেই ছিল, সেটা বর্তমানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন