দার্জিলিং, নেপালের হিমালয় পাদদেশের ভারতীয় জেলা। সেখানে একদিকে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো উচ্চতম পর্বতশ্রেণি দেখার হাতছানি, অন্যদিকে রয়েছে বৈচিত্র্যময় পাহাড় ভ্রমণের সুযোগ! পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের এ জেলা দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। বাংলাদেশিদের কাছেও দার্জিলিং মানে বিশেষ গন্তব্য। কিন্তু যাতায়াত খুব সহজ নয়। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে চলতি বছর চালু হয়েছে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলরুট। ৫৫ বছর পর চালু হওয়া এ রুট বাণিজ্যের পাশাপাশি দুই দেশের পর্যটনের জন্য হবে নতুন দিগন্ত।
ভারতের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ। এই রুট দিয়ে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে আগেই। করোনা সংকটের কারণে বন্ধ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। তবে দুই দেশের করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এই রুটে চালু হতে পারে যাত্রীবাহী ট্রেন, যা সহজ করবে ঢাকা-দার্জিলিংয়ের সংযোগ। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে অন্য রেলপথও খুলে যাবে এই সময়ে। তবে করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে সবকিছু।
রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, দীর্ঘ দেড় বছর পর পর্যটকদের জন্য ভিসা চালু করেছে ভারত। ১৫ অক্টোবর থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে পর্যটক ঢুকতে পারছেন। এখনো রেলপথে ভ্রমণের বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। তবে প্রস্তুত উভয় দেশ। কাজ চলমান। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পুনরায় রেল যোগাযোগ শুরু হবে বলে আশা করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। চুয়াডাঙ্গার গেদে বর্ডার হয়ে রেলপথে ভারতে যাতায়াত করা যাবে। এছাড়া খুলনা-কলকাতা রুটেও রেল চলাচল শুরু হবে বলে আশা।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা বলেন, ফ্লাইটে ভারতে যাতায়াত শুরু হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে রেলপথেও ভারতে যাতায়াত করা যাবে। আমরা এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। করোনার প্রকোপ কমেছে। আশা করি ডিসেম্বর মাসেই ভারতের সঙ্গে রেলপথে যাতায়াত করতে পারবো। ফলে ঢাকা-দার্জিলিংসহ অন্য রুটও এই সময়ে খুলে যাবে। তবে নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।
দীর্ঘ ৫৫ বছর পর বাংলাদেশ ও ভারতের চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ভারত অংশে তিন কিলোমিটার ও বাংলাদেশ অংশের ৬ দশমিক ৭২ কিলোমিটার রেলপথ পুনঃস্থাপন হয়। রেলপথটি আন্তর্জাতিক রূপ দিতে নতুন নতুন কিছু কাজ অন্তর্ভুক্ত হবে। নির্মাণ করা হবে চার কিলোমিটার লুপ লাইন, আটটি লেভেল ক্রসিং ও নয়টি ব্রিজসহ অন্যান্য অবকাঠামো।
পাশাপাশি চিলাহাটিতে একটি আধুনিক আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনও নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলপথটি নতুন করে সাজাতে আরও কিছু স্টেশন, বিল্ডিং প্ল্যাটফর্ম, লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে আরও ঢেলে সাজানো হবে রেলপথটি। একইভাবে হলদিবাড়ি থেকে নেপালের সীমান্তবর্তী বিহার রাজ্যের জগবানি স্টেশন পর্যন্তও ট্রেন চালু করা যাবে। ওই দুই স্টেশন থেকে সড়কপথে ভুটান ও নেপালে পণ্য পরিবহন করা যাবে। এ রুটটি ঘিরে এসব পরিকল্পনাও করছে বাংলাদেশ।
চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিংক স্থাপনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহীম বলেন, রেলপথটি এরই মধ্যে চালু হয়েছে। বর্তমানে এ রেলপথ দিয়ে মালবাহী ট্রেন চলাচল করছে। তবে করোনার কারণে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ। দ্রুত সময়ে এই পথ খুলে দেওয়া হবে। রেলপথজুড়ে আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এজন্য আরও কিছু অর্থ ব্যয় করা হবে রেলপথটিতে।
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে এ পথটি বন্ধ হয়। ২০১৫ সালে বন্ধ থাকা রেল লিংক পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল লিংকটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চিলাহাটি ও চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে রেলপথ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প ২০১৮ সালে একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়।