রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মনে করেন, ক্ষমতা বাহাদুরি দেখানোর জন্য নয়, বরং এটা জনগণের কল্যাণে কাজে লাগানো উচিত। এজন্য সরকারি কর্মকর্তা কিংবা জনপ্রতিনিধি যেই হোক, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ না করে তা দায়িত্ব পালনে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে জেলার জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রাষ্ট্রপতি এই আহ্বান জানান।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনসহ সবাইকে কাজ করতে হবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনসহ সবাইকে কাজ হবে।
কিশোর গ্যাং নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রায়ই খবর প্রকাশিত হচ্ছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় তিনি আগামী দিনে করোনা মহামারির মতো বিভিন্ন মারাত্মক রোগ মোকাবেলার লক্ষ্যে দেশের স্বাস্থ্য খাতকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবনী কৌশল নিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আগামী বছরগুলোতে করোনাভাইরাসের মতো সংকট মোকাবেলায় একটি অধিক কার্যকর স্বাস্থ্য খাত গড়ে তুলতে হবে।’
চিকিৎসা পেশাকে খুবই চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনো আরও দক্ষ মানবসম্পদ বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্সিং স্টাফ এবং চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদদের প্রয়োজন।’
করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিয়মের দিকে ইঙ্গিত করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘যদিও আমরা স্বাস্থ্যসেবা খাতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছি, কোভিড মহামারি আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কিছু ত্রুটিও উন্মোচিত করেছে।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘করোনা মহামারির তৃতীয় দফা সংক্রমণের সময়, যেখানে অনেক উন্নত দেশ তাদের অত্যন্ত দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ব্যাপকভাবে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে, তখন বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষতার সাথে সংকট কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হয়েছে।’
স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ সফলতা ও দক্ষতার সাথে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। করোনা মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার এবং জীবিকা সচল রাখার ক্ষেত্রে মার্কিন বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গ পরিচালিত ‘কোভিড রেজিলিয়েন্স র্যাঙ্কিং’-এ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে বিশতম স্থানে রয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের অব্যাহত সরবরাহ নিশ্চিত করতে পেরেছি। টিকাদান কার্যক্রম পুরোদমে চলছে এবং প্রায় চার কোটি ৮০ লাখ মানুষ ইতিমধ্যে কমপক্ষে প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছে।’
নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে এবং সারা বিশ্বের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠছে। শিক্ষার সামগ্রিক মান খুবই ভালো এবং অন্যান্য উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনীয় এবং শিক্ষার্থীদের এখানে এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করার জন্য সাশ্রয়ী ব্যয়ে হাসপাতালে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজ নিজ দেশে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ ন ম নওশাদ খান কলেজের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতির সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি কিছু উন্নয়ন প্রকল্প দেখার জন্য সাত দিনের সফরে তার নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে রয়েছেন। তিনি শুক্রবার থেকে বেশ কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।