নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের খসড়া করছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

একটি খসড়া আইন আইনমন্ত্রীর কাছে তুলে দেন বিশিষ্ট নাগরিকরা
একটি খসড়া আইন আইনমন্ত্রীর কাছে তুলে দেন বিশিষ্ট নাগরিকরা

নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের খসড়া তৈরি করছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার রাতে নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের তিনি এ কথা জানান। তবে এই আইনের খসড়া কবে নাগাদ সামনে আসবে, তা নিয়ে মন্ত্রী কিছু জানাননি। ফলে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন আইনের মাধ্যমে গঠন হচ্ছে না। অবশ্য সরকার পূর্ববর্তী দুটির মত নতুন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধি গুলশানে আইনমন্ত্রীর বাসায় যান। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা নির্বাচন কমিশন গঠনে দেশের ‘চিন্তাশীল ও বিশেষজ্ঞ নাগরিকদের’ মতামত নিয়ে প্রণীত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২১’ শিরোনামে একটি খসড়া আইন আইনমন্ত্রীর কাছে তুলে দেন। তারা ওই খসড়া আইনটির ভিত্তিতে নতুন আইন করার অনুরোধ জানান। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইন করে নতুন কমিশন গঠনের কথা বলেন। প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করে হলেও এটা করার পরামর্শ দেন।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক ও অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ এবং সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার এসময় উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রায় রাত সাড়ে নয়টার দিকে তারা মন্ত্রীর বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন বলে জানান।

সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা আমাদের খসড়া প্রস্তাব মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছি। তিনি জানিয়েছেন, এখন আইন করার সময় নেই। সময়ের অভাব।

অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তিনি জানিয়েছেন সরকারও নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের চিন্তা করছে, প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। সরকার খসড়া করছে, বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। তবে এখন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করার সময় নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

পরে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তারা একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা সেটার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রয়োজনে আবারও বসবো। আমরা বলেছি, আমরা যেটা করেছি এর সঙ্গে কী সামঞ্জস্য আছে কী নেই, এসব আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো।

আইনমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, উনারা বললেন, যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটা করা সম্ভব, কিন্তু আমি পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচন কমিশন আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা ঠিক হবে না। সংসদের মাধ্যমে করা উচিৎ। এটা অল্প সময়ের মধ্যে করা সম্ভব না।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে করা খসড়াটি কবে নাগাদ সামনে আসতে পারে, এমন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এটা তো এখনই বলা সম্ভব না। তৈরি করছি। কোনও নির্বাচনকে টার্গেট করে এটা করা হচ্ছে না।

আগামী বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। এর আগে গঠন করা হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। আইনমন্ত্রী ইতোমধ্যে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এবারের কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন। তবে নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আইন করে নতুন কমিশন নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।

নতুন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার দিন ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের কথা বলেছিলেন। ওইদিন সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা চাই পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা হোক। সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে এখন থেকেই সে উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। অবশ্য এরপর বিগত ৫ বছরে ইসি নিয়োগে আইন প্রণয়নে সরকার বা ইসির কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।

শেয়ার করুন