হোয়াইট হাউসে গুরুত্ব হারিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইং বা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে তিনি যথাযথ সাহায্য পাচ্ছেন না। তাঁকে পাশ কাটিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা প্রার্থী হতে পারেন ভেবেই তাঁর অবস্থানকে দুর্বল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন কমলা হ্যারিসের ঘনিষ্ঠজনেরা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখন বহুবিধ আইন প্রণয়ন ও রাজনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছেন। তা সামলাতে দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্ত হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের দিকে ঘুরে তাকানোর সময় নেই তাঁদের, বরং কমলা হ্যারিসকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। কমলা হ্যারিসের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের হাতে নেই। কমলা হ্যারিসের প্রায় তিন ডজন সাবেক এবং বর্তমান সহকারী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উপদেষ্টাসহ ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সম্পর্কের দূরত্ব নিয়ে চাপা উত্তেজনা চলছে।
সিএনএনের ওই প্রতিবেদনে হোয়াইট হাউসের ভেতরের জটিল বাস্তবতা উঠে এসেছে। ভাইস প্রেসিডেন্টের আশপাশের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, কমলা হ্যারিসের অবস্থান ঠিক নেই। তাঁকে একপেশে করে রাখা হয়েছে। কমলা হ্যারিস নিজেও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন, তিনি রাজনৈতিকভাবে যা করতে পারতেন, তা করতে এখন বাধা পাচ্ছেন বলে মনে করছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের টিম ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রতি কোনো আনুগত্য দেখাচ্ছে না। তাই কমলার আশপাশের লোকজন তাঁর ভবিষ্যতের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়ে কমলার হাতে বেশি সময় নেই। নিজে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে প্রচার কর্মসূচি শুরুর জন্য মাত্র এক বছরের মতো সময় তাঁর হাতে রয়েছে। কমলা হ্যারিসের প্রস্তুত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বাইডেনের বয়স। বর্তমানে বাইডেনের বয়স ৭৯ বছর। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যখন প্রথম মেয়াদ শেষ করবেন, তখন তাঁর বয়স হবে ৮২ বছর। তিনি আরেক মেয়াদ প্রার্থী হতে পারবেন না বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাইডেন। তিনি এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথাও বলেছেন। নির্বাচনে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে হলে বাকি তিন বছর তাঁর সমালোচনা করতে হবে কমলা হ্যারিসকে। এতে দূরত্ব আরও বাড়বে।
সিএনএনকে কয়েকটি অভ্যন্তরীণ সূত্র বলেছে, যে ভূমিকাই হোক না কেন তার জন্য কমলা হ্যারিস ভালোভাবে প্রস্তুত হচ্ছেন। কিন্তু হোয়াইট হাউসের কয়েকটি অংশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ইতিমধ্যে খারাপ হয়ে গেছে। তাঁর দীর্ঘদিনের সমর্থকেরা মনে করছেন, তাঁকে পরিত্যাগ করা হয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি কী করেছেন বা করার চেষ্টা করছেন, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা পাচ্ছেন না জনগণ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ও মিশ্র বর্ণের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস গড়লেও কমলার ওপর নজর রাখা হচ্ছে তীক্ষ্ণভাবে। সামান্য ভুলের জন্যও তিনি ক্ষমা পাবেন না। এ কথা কমলা নিজেও প্রায়ই বলে থাকেন। সিএনএন বলছে, কমলা হ্যারিস এমন একটি দুর্বল অবস্থানে রয়েছেন যে ওয়াশিংটনের ভেতরে ও বাইরের শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাটরা এ নিয়ে নানা অনুমান করতে শুরু করেছেন। প্রশ্ন উঠছে, কেন হোয়াইট হাউস তাঁকে নানা কাজে বাধা দিচ্ছে? কমলা হ্যারিসের বন্ধু ও ক্যালিফোর্নিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর এলেনি কোনালাকিস বলেন, ‘আমরা যাঁরা কমলাকে চিনি তাঁরা জানি, তিনি কতটা সহায়ক একজন মানুষ। আগের চেয়ে তাঁকে অনেক বেশি সহায়তা করার কথা ছিল। এখনকার অবস্থা থেকে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে।’
কমলা হ্যারিস প্রথম কয়েক মাসে পরিচিত হওয়ার পরে বাইডেনের পাশে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই ওয়েস্ট উইং প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করলে তাঁর উপস্থিতি কমতে শুরু করেছে। আর এখন হোয়াইট হাউসে তাঁর কোণঠাসা পরিস্থিতির কথা জানা গেল।