কাজিরহাট-আরিচা রুটে ৬ কিলোমিটার যানজট

পাবনা প্রতিনিধি

যানবাহনের দীর্ঘ সারি
যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ফাইল ছবি

পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট-আরিচা রুটে মাত্র তিনটি ছোট ফেরি দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে যানবাহন। এর মধ্যে একটি ফেরি প্রায়ই বিকল থাকে। এতে পণ্যবাহী যানবাহনকে ২-৩ দিন ঘাটে আটকে থাকতে হচ্ছে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পরিবহন শ্রমিকদের। গত ২৪ ঘণ্টায় দুই পাড়ে ৫ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষার রয়েছে। ফলে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে দীর্ঘ যানজট।

শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সকালে কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ফেরি স্বল্পতার কারণে এই রুট এখন সবার জন্য গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ জরুরি পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঘুরে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।

universel cardiac hospital

যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়া-আসার পথে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। ফলে ট্রাকসহ অনেক যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু এড়িয়ে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে ফেরিতে ঢাকায় যাওয়া-আসা করছে। এতে নৌপথে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অথচ গত ১০ দিনের বেশির ভাগ সময় এই নৌপথে চলাচল করছে দুটি ফেরি।

যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা অভিযোগ করে বলেন, এই নৌপথে কমপক্ষে আটটি ফেরির প্রয়োজন। সম্প্রতি পাঁচটি ফেরি দিয়েছিল ঘাট কর্তৃপক্ষ। ঘাটে তিন সপ্তাহ ধরে কোনো যানজট ছিল না। অনায়াসে আমরা পারাপার হয়েছি। কিন্তু আজ ১০ দিন ঘাটে ব্যাপক যানবাহনের চাপ থাকলেও এখান থেকে বড় ফেরি দুটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও বিআইডব্লিউটিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মী জানান, এই ঘাটে যেসব ফেরি দেওয়া হয়েছে সবই পুরোনো ও ত্রুটিযুক্ত। তাই এই পরিবর্তনে সংকট আরও বেড়েছে। দু-একদিন পরই ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফেরি সকালে গিয়ে ফেরে গভীর রাতে। তাহলে ঘাটের যানজট কীভাবে নিরসন হবে?

সরেজমিনে দেখা যায়, কাজীরহাট ট্রাক টার্মিনাল থেকে শুরু করে কাশিনাথপুর-কাজীরহাট সড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে তিন শতাধিক ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন ফেরির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে আরিচা ঘাটরেও একই অবস্থা। দুই ঘাট মিলে পাঁচ শতাধিক ট্রাক আটকা রয়েছে।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী ছোট গাড়িগুলোকে ফেরিতে উঠার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন ট্রাকচালক জানান, কোনো কোনো পণ্যবাহী ট্রাককে আরিচায় যাওয়ার জন্য দুই থেকে তিন দিন ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার কেউ পাঁচ দিন ধরেও অপেক্ষা করছে।

ঘাটে আটকে থাকা লালমনিরহাট থেকে আগত ট্রাকচালক মইনুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, দুই দিনের বেশি সময় ধরে পণ্য নিয়ে ফেরিঘাটে আটকা আছি। যানজটের কারণে অনেক যানবাহনই এখন বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিবর্তে এই ফেরিঘাট হয়ে ঢাকা যাওয়া-আসা করছে। ফলে যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। অথচ মাত্র তিনটি ‘লক্করঝক্কর’ মার্কা ফেরিতে যানবাহন পারাপার চলছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঘাটে ট্রাকের জট বাড়তেই থাকবে।

কয়েকজন ট্রাকচালক জানান, ঘাটে আটকে থাকায় খাওয়া ও শৌচাগার নিয়ে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কে আলো ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা না থাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় অবস্থান করতে হচ্ছে তাদের। ট্রাক টার্মিনাল ও আবাসিক হোটেল নির্মাণের দাবি জানান তারা।

বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মাত্র তিনটি লক্করঝক্কর ফেরি দিয়ে এই নৌপথ পরিচালনা করা যাচ্ছে না। যেভাবে কাজীরহাট ফেরিঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে, তাতে প্রতিদিন ফেরিগুলোর ৩৫-৪০টি ট্রিপের প্রয়োজন। অথচ তিনটি ফেরি দিয়ে ১০-১২টি ট্রিপ দেওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঘাটে কোনো ট্রাক এলে সেটিকে ফেরিতে ওঠার জন্য কমপক্ষে ২-৩ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এভাবে ঘাট পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

শেয়ার করুন