জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার দায়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি আ’লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই সঙ্গে বৈঠকে মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ২৩ অক্টোবর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে আগামী ১৯ নভেম্বর বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘কটূক্তি’র একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ১১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, হেফাজতের প্রয়াত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে তার সখ্য ও রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
এরপর গাজীপুরে দলের নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। তার বহিষ্কার দাবি করে সড়ক অবরোধ করে মিছিল-সমাবেশও করেন নেতাকর্মীরা। দলের নেতাকর্মীরা এই ধরনের কাজকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখেন। এরপর গত ৩ অক্টোবর ‘দলের স্বার্থপরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে’ তাকে শোকজ চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
সেই ভিডিওতে মেয়র বলেন, আমি যদি ছবি দিয়েই থাকি, আমি শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর নিচে কারও ছবি দেইনি। আমি কোনো দিনই রাসেল সাহেবের ছবি দেই নাই, মোজাম্মেল হকের ছবিও দেই নাই। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় অন্যজন বলেন, ‘টার্গেট ঠিক’।
মেয়র জাহাঙ্গীর বলেন, তোমার টার্গেট হচ্ছে মামুন পর্যন্ত। তুমি উঠলে কুদ্দুর (কতটুকু) উঠবা। তুমি তো স্বপ্নই দেখ না। মানুষ স্বপ্ন দেখে না? মানুষ ছোট থাকতে জিগায় ডাক্তার হমু, ইঞ্জিনিয়ার হমু, চেয়ারম্যান, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হমু, বলে না বাচ্চারা? তোমার টার্গেট হয়েছে তুমি মামুনের মতো হবা। যদি পিতারে অস্বীকার করে সে জারজ সন্তান হবে। মামুন প্রথমেই একজন মেয়রকে অস্বীকার করে, সে জারজ সন্তান তো। আমরা চাই এটা করতে, আমাদের চার-পাঁচজন কাউন্সিলর চায় উল্টো। হিসেবে এগুলোরে মেরে ফেলা উচিত। পৃথিবীর অন্য দেশ হলে মেরে ফেলা হতো। চায়না হলে সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলতো। তুমি যদি ডেভেলপের অ্যান্টিতে থাকো, যেমন- চায়নায় ছাত্ররা যখন আন্দোলন করেছে, তখন হেলিকপ্টারে করে বোম দিয়ে মাইরালাইছে। চায়নার জাতির পিতা এ কাজ করেছে। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশকিছু কথা বলেন।
এছাড়া বৈঠকে আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নতুন করে তিনজনকে যুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও রাজশাহী মহানগর আ’লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আ’লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।