করোনা মহামারির সময় দেশের অর্থ-ব্যবসা ঠিক রাখতে একের পর এক সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে ঢালাওভাবে ছাড় দেওয়া হয় ঋণখেলাপি কমাতে। এতসব সুবিধার পরও খেলাপি ঋণ কমছে না। যেন কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তেমন সদিচ্ছা না থাকায় তা কমছে না। খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এর পাল্লা দিনদিন আরও ভারী হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে খেলাপি ঋণ। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে খেলাপি বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন মতে, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে রূপান্তরিত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৮.১২ শতাংশ।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৭.৬৬ শতাংশ। হিসাব মতে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা খেলাপি বেড়েছে। তবে ২০১৯ সালের একই সময়ে (সেপ্টেম্বর শেষে) খেলাপি ঋণ এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল।
গত বছর করোনার কারণে কোনো টাকা পরিশোধ না করেও সেই গ্রাহককে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এ বছরও নতুন করে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় খেলাপি আদায়ে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত একজন গ্রাহক তার ঋণের চার ভাগের এক ভাগ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। এতসব সুবিধের পরও বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট দুই লাখ ১৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২০.০৭ শতাংশ। গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ছিল ৪২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। সে সময় বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ দুই হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলো নয় লাখ ২৮ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৫.৪৭ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৪০ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৪.৬৬ শতাংশ।
আলোচিত সময়ে (সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) বিদেশি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ হয় ৬৫ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে দুই হাজার ৬৯২ কোটি টাকা যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪.১২ শতাংশ।
বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংক বিতরণ করেছে মোট ৩২ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে তিন হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ১১.৪৪ শতাংশ।
খেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এর পাল্লা দিনদিন ভারী হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তেমন সদিচ্ছা নেই সরকারের। এর ফলে প্রতিনিয়ত খেলাপি বাড়ছে। এখন খেলাপিরা সবাই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় অসুবিধা তৈরি হচ্ছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আরও কঠোর হতে হবে।