সাম্প্রদায়িকতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ইসলাম ও মানবতার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে টানা তৃতীয়বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদের বিশেষ আলোচনায় ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাব তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে উত্থাপিত প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবনার উপর পূর্ণ সমর্থন রেখে আমি আমার বক্তব্য শেষ করতে পারতাম, কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উপর আলোচনায় রণাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি আরও কিছু কথা বলতে চাই একই সাথে আমি বলি, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, তারপরে সেদিন মুস্তাকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে যারা রাজপথে নামার ধৃষ্টতা দেখিয়ে ছিল তাদের একজন হিসেবেও আমি আজকে দুটো কথা বলার সুযোগ পেয়ে ধন্য হয়েছি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে রাষ্ট্রকে আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছেন সেই রাষ্ট্র সম্পর্কে বলেছেন ‘ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আদর্শের প্রয়োজন আছে।’
বঙ্গবন্ধুর সেই দর্শন ও আদর্শ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়ে আমি ভাবি; একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সাথে সম্পৃক্ত তা-ই আমাকে ভাবায়, এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা; যে ভালোবাসা আমার রাজনীতিকে অর্থবহ করে তুলে।’-অসমাপ্ত আত্মজীবনী (৩ মে ১৯৭৩)। তিনি বলেন, আমি এই কথাগুলো এজন্যই বললাম যে, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেই সামনের দিকে এগিয়ে যাব। এই আদর্শকে ধারণ করেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, বঙ্গবন্ধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার যে আত্মপ্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেটি বাঁধাগ্রস্ত হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘তিনি রাব্বুল আলামিন, রাব্বুল মুসলিমীন নন, হিন্দু হউক, খ্রিস্টান হউক, বৌদ্ধ হউক সমস্ত মানুষ তাঁর কাছে সমান।’ বঙ্গবন্ধুর এই কথাগুলো থেকে আজকে আমরা সরে যাচ্ছি কিনা সেটা একটু ভেবে দেখা দরকার।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, তিনি(বঙ্গবন্ধু) আরও বলেছিলেন, ‘যাদের মনের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা তারা হলো বন্য জীবের সমতুল্য। সাম্প্রদায়িকতা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এই বাংলাদেশে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশে মুসলমান তার ধর্মকর্ম করবে, হিন্দু তার ধর্মকর্ম করবে, বৌদ্ধ তার ধর্মকর্ম করবে কেউ কাউকে বাঁধা দিতে পারবে না।’ এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। কিন্তু আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাঝে আমাদের ভাবতে হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা সাম্প্রদায়িকতা এখন কোন পথে আছে? বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতা যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, যদি এখন সেটিকে দমন না করা হয় তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের যে সমস্ত অর্জন হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা সব অর্জনকে খেয়ে ফেলতে পারে। সাম্প্রদায়িকতাকে যদি আমরা পদাবনত করতে না পারি তাহলে আমাদের অগ্রযাত্রা বাঁধাগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, কাজেই আমাদের শিক্ষা কমিশন, আমাদের ও আমাদের অন্যান্য যেসমস্ত সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আছে সেগুলোকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সাম্প্রদায়িকতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিপন্থী, সাম্প্রদায়িকতা ইসলামের পরিপন্থী, সাম্প্রদায়িকতা মানবতার পরিপন্থী।