৩ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুজবের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন এবং খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে নাশকতা ছড়ানোর আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুজব ছড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে একটি চক্র অপতৎপরতায় লিপ্ত। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় আন্দোলনকারীরা দ্রুত প্রকৃত ঘটনা জানতে পারায় কোনও অঘটন ঘটেনি। চক্রটি এখনও সুযোগের সন্ধানে রয়েছে। যেকোনও সময় গুজব ছড়িয়ে মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গুজব ছড়াতে তারা বরাবরের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেছে নিয়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুরে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রথমে এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হয়। যদিও সেদিন এক নারী ও পাঁচ পুরুষ শ্রমিক আহত হয়। তারা চিকিৎসাধীন। পরদিন ২৪ নভেম্বর বৃহত্তর মিরপুরের ৬/৭টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসেন। পরবর্তী সময়ে মালিকদের মাধ্যমে পুলিশ শ্রমিকদের জানায়, ২৩ নভেম্বর কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন, কেউ নিহত হয়নি। আহতরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও বাসায় চিকিৎসাধীন। তাদের সব চিকিৎসা ব্যয় গার্মেন্টস মালিকরা নিয়েছেন। এরপর পোশাক শ্রমিকরা শান্ত হন।

universel cardiac hospital

ওই ঘটনায় মিরপুর ১৪ নম্বরে রিশাল গার্মেন্টসের আয়রনম্যান মো. হারুন আহত হন। তিনি বর্তমানে বাসায় চিকিৎসাধীন।

রিশাল গার্মেন্টসের শ্রমিক রাজু বলেন, ২৩ নভেম্বর আইডিএস গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বেতন ভাতার দাবিতে আন্দোলন করে। এ কারণে আমাদের আশপাশের সব অফিস ছুটি ঘোষণা করে। পরে আইডিএসের মালিক সব দাবি মেনে নেয়। কিন্তু মাঝখান দিয়ে এমবিএম গার্মেন্টসের মালিক পক্ষের ভাড়া করা বহিরাগত লোকজন রিশাল গ্রুপের সামনে এসে অনেককে মারধর করে। এতে এক নারীসহ ছয় জন আহত হন।

তিনি বলেন, আহত হারুনের সব খরচ রিশাল গ্রুপ বহন করবে। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি বেতন পাবেন। এরপর শ্রমিকরা শান্ত হন।

এদিকে, ২৩ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়। রাত ১১টার দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানোর পর সেই গুজব প্রতিরোধ হয়।

অপরদিকে, হাফ ভাড়া নিয়ে চলমান আন্দোলনের মধ্যে নটর ডেম শিক্ষার্থী নাঈম হাসান গাড়িচাপায় নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়। ২৪ ও ২৫ নভেম্বর টানা দুদিন রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও তীব্র হয়। শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে নাঈম হত্যা ও হাফ ভাড়ার বিষয়ে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে। অভিযুক্ত চালক গ্রেফতার হলেও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ কমেনি।

গোয়েন্দারা জানিয়েছে, এই তিন ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি চক্র গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। গত এক সপ্তাহ ধরে একটি চক্র এই গুজবের অপচেষ্টা করছে। তবে প্রতিবারই তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা হয়েছে।

সরকার প্রতিটি ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় সুবিধা নিতে পারেনি গুজবকারীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া চালুর বিষয়ে আগামী শনিবারের (২৭ নভেম্বর) মধ্যে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হবে।

এদিকে গুজব করে নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশের বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সতর্কতার অংশ হিসেবে কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত কর্মকর্তাদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

ডিএমপির একজন উপ-কমিশনার বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে কেউ যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশের সব ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, একটি চক্র গুজব ছড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে চায়। ইতোমধ্যে আমরা মিরপুরের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। তারা শ্রমিকদের উসকে দিচ্ছিল। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

তিনি বলেন, যারা ফেসবুকে গুজব ছড়িয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে সাইবার ক্রাইম টিম কাজ করছে। গুজবের বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। গুজবকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

শেয়ার করুন