হেবিয়াস করপাস (জোর করে হেফাজতে রাখা কাউকে আদালতে প্রদর্শন) রিট মামলায় শিশুর অভিভাবকত্ব নির্ধারণের সুযোগ নেই, সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতেই তা নির্ধারিত হবে। হাইকোর্টের এক রায়ে এ কথা বলা হয়েছে।
এক শিশুসন্তানকে হেফাজতে রাখা নিয়ে তার মায়ের করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৭ নভেম্বর এক রায় দেন। পাঁচ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সেখানেই এ কথা বলা আছে।
রায়ে বলা হয়েছে, শিশুদের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কে মামলাগুলো দীর্ঘ সময় ধরে চলমান থাকা দুঃখজনক ও হতাশাজনক এবং ন্যায়নীতির পরিপন্থী। আদালতের নজরে এসেছে যে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দাখিল করা মামলাগুলো দীর্ঘ সময় ধরে চলমান। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ অবস্থায় সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সব পারিবারিক আদালতগুলোকে শিশুসন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কিত মামলাগুলো দায়েরের ছয় মাসের মধ্যে সম্ভব হলে নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেওয়া হলো।
রংপুরের এক মেয়ে ও রাজশাহীর এক ছেলের ২০১১ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিয়ে হয়। ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তাঁদের কন্যাশিশুর জন্ম হয়। ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর ওই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়। শিশুটি তার বাবার কাছে ছিল। ছয় বছর বয়সী শিশুটিকে ফিরে পেতে তার মা হাইকোর্টে রিট (হেবিয়াস করপাস) করেন। হাইকোর্ট ১২ সেপ্টেম্বর রুলসহ আদেশ দেন। পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনাসহ রিটটি নিষ্পত্তি করে ৭ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। এর আগে ঢাকার পারিবারিক আদালতে শিশুটির অভিভাকত্ব ও হেফাজত সম্পর্কে ২০২০ সালে মামলা করেন।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, হেবিয়াস করপাস রিট মামলায় শিশুর অভিভাবকত্ব নির্ধারণের সুযোগ নেই, সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতেই তা নির্ধারিত হবে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতকে ৩১ মার্চের মধ্যে ওই মামলাটি (শিশুটির মায়ের করা) নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হলো। সামগ্রিক প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে বিশেষত শিশুসন্তানের সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ওই মামলাটি (পারিবারিক আদালতে শিশুর মায়ের করা মামলা) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশুসন্তানটিকে বাবার হেফাজতে থাকার সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো। মা রাজশাহীতে শিশুটির বাবার বাসায় কিংবা রাজশাহী শহরের যেকোনো স্থানে সন্তানের সঙ্গে দেখা ও একান্তে সময় কাটনোর সুযোগ পাবেন।
পারিবারিক আদালত অবমাননায় শাস্তি কঠোর করা বাঞ্ছনীয়
রায়ে আদালত বলেছেন, এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে সম্প্রতি হাইকোর্ট বেঞ্চে পিতা-মাতার বিবাহবিচ্ছেদ, মনোমালিন্য, দাম্পত্য কলহসহ বিভিন্ন কারণে শিশুদের হেফাজত সম্পর্কে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হেবিয়াস করপাস মামলা পরিচালনা করতে হয়েছে এবং হচ্ছে।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, পারিবারিক আদালতগুলোর বিভিন্ন আদেশ বিশেষত, শিশুসন্তানকে দেখা-সাক্ষাতের আদেশসংশ্লিষ্ট পক্ষ মান্য করছে না, ফলে তারা হাইকোর্টে এসে হেবিয়াস করপাস অধিক্ষেত্রে আশ্রয় গ্রহণ করছেন। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক অধ্যাদেশের ১৯ ধারা অনুযায়ী পারিবারিক আদালতকে অবমাননা করলে অবমাননাকারীকে মাত্র দুই শ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। সময়ের বাস্তবতায় শাস্তির এই বিধানটি সংশোধন করে আরও কঠোর করা বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে সিভিল জেল ও পর্যাপ্ত জরিমানার বিধান প্রণয়ন সময়ের বাস্তবতা। সরকারের নীতিনির্ধারক মহল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আদালত প্রত্যাশা করেন।