বিশ্বজুড়ে ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন
ফাইল ছবি

ইউরোপসহ বিশ্বের কিছু দেশে করোনাভাইরাসের আরো সংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার কথা জানা গেছে গতকাল রবিবার। এদিকে টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা ওমিক্রন মোকাবেলার উপযুক্ত করতে প্রচলিত টিকাগুলোরই কিছুটা পরিবর্তন করবে।

নেদারল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ গতকাল জানিয়েছে, কোয়ারেন্টিনে থাকা ৬১ জন যাত্রীর মধ্যে ১৩ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুটি ফ্লাইটে আসা ওই ৬১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তাঁদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তখন ডাচ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তাদের কারও কারও শরীরে নতুন ধরন থাকতে পারে। এর পর আরো নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে ১৩ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করল নেদারল্যান্ডস।

universel cardiac hospital

যুক্তরাজ্যে নতুন এই ধরন শনাক্ত হয়েছে দুজনের শরীরে। এরপর দেশটি ভ্রমণ আইন কঠোর করেছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেছেন, ইংল্যান্ডে গণপরিবহন ও শপিং মলগুলোতে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, বিদেশ থেকে আগত সবাইকেই পিসিআর টেস্ট করতে হবে।

মোজাম্বিক থেকে ইতালিতে আসা এক যাত্রীর শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে জার্মানির মিউনিখে আসা এক যাত্রীর শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়।

এদিকে গতকাল অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তারা এই প্রথম দুজন যাত্রীর শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত করেছে। ওই দুই যাত্রী আফ্রিকার দক্ষিণের দেশ থেকে শনিবার সিডনিতে পৌঁছান। এরপর পরীক্ষায় তাদের শরীরের করোনাভাইরাসের ওই নতুন ধরন শনাক্ত হয়। নিউ সাউথ ওয়ালসের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে দোহা হয়ে কাতার এয়ারওয়েজের ওই ফ্লাইটটি সিডনিতে অবতরণ করার পর যাত্রীদের পরীক্ষা করা হয়। নতুন ধরন শনাক্ত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ‘জেনোমিক টেস্ট’ করে নিশ্চিত হয় তারা। তবে ওই দুই যাত্রীর মধ্যে রোগের কোনো উপসর্গ নেই। তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। ওই দুজনের করোনার টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ নেওয়া রয়েছে। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে একই ফ্লাইটে আসা আরো ১২ যাত্রীর শরীরে করোনা পাওয়া না গেলেও তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ওই ফ্লাইটটি অবতরণের দিন শনিবারই অস্ট্রেলিয়া আফ্রিকার দক্ষিণের ৯টি দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করে।

ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ বলেছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ ঠেকাতে তারা সব বিদেশিদের প্রবেশ বন্ধ করতে যাচ্ছে। গতকালই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কথা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশেষ কমিটির অনুমোদন ছাড়া সব বিদেশির প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসরায়েলের নাগরিকদের যদি টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ নেওয়া থাকে, তবে তারা ঢুকতে চাইলে পিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে এবং তিন দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। আর টিকা না নেওয়া থাকলে সাত দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

এদিকে আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে অ্যাঙ্গোলা তার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে।

নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, দেশটিতে নতুন ১৪৮ কভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে একজন। এ ছাড়া গত শনিবার চীন জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে দেশটিতে তিনজন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে এবং বাইরে থেকে আসা ২০ জনের শরীরে কভিড শনাক্ত হয়েছে।

অত্যন্ত সংক্রামক করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন কতটুকু হুমকি এবং প্রচলিত টিকাগুলো এই ধরন মোকাবেলায় কাজ করবে কি না তা নির্ণয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ডেল্টার চেয়ে এই ধরন বেশি সংক্রামক, তা এরই মধ্যে প্রমাণ হয়েছে। তবে টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আশার কথা শুনিয়েছে। তারা বলছে, নতুন ধরন মোকাবেলায় বর্তমান টিকাগুলোকে পরিবর্তন করতে পারে তারা। জার্মানির বায়োএনটেক ও যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার বলেছে, তাদের টিকা পরিবর্তন করতে হবে কি না তার জন্য দুই সপ্তাহের মধ্যে এই নতুন ধরনের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার আশা করছে। মডার্না বলেছে, তারা নতুন এ ধরনের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি বুস্টার ডোজ তৈরি করবে।

সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

শেয়ার করুন