এবার সংসদীয় কমিটির এক বসায় ৩ বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদ
ফাইল ছবি

ইতোপূর্বে এক বসায় দুই বৈঠক করলেও এবার এক বসায় তিনটি বৈঠক করেছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। আজ বুধবার এই কমিটির তিনটি (৫৫, ৫৬, ৫৭তম) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংসদীয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, দেড়ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তিনটি বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে এই কমিটি বেশ কয়েক দফায় এক বসায় দুটি করে বৈঠক করেছে।

জানা গেছে, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বুধবার বিকালে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের বিষয়ে সংসদ সচিবালয় থেকে আগের দিন যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, সেখানে একটি (৫৫তম) বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়। তবে একটির পরিবর্তে একই দিনে এবং এক বসায় তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সব মিলিয়ে তিনটি বৈঠকের জন্য দেড়ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে।

সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজীর সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শহীদ, মো. শহীদুজ্জামান সরকার, র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ও ওয়াসিকা আয়শা খান বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবারের বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানির অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়।

এ বসায় একাধিক বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য আব্দুস শহীদ বলেন, কমিটির বৈঠকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন সভাপতি। এক্ষেত্রে সদস্য হিসেবে আমাদের কিছু করণীয় নেই। এক থেকে দেড়ঘণ্টা সময়ে তিনটি বৈঠক হলে তা কতটা ফলপ্রসূ হয়—সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেনতেন আলোচনা করে লাভ কী।

এ ধরনের বৈঠক বিধিসম্মত নয় উল্লেখ করে সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ বলেন, কার্যপ্রণালি বিধিতে মাসে কমপক্ষে একটি বৈঠকের কথা বলা আছে। বেশি বৈঠক হলে কোনও সমস্যা নেই। আপনি চাইলে মাসের প্রতিদিনই বৈঠক করতে পারেন। কিন্তু একদিনে একাধিক বৈঠক বা একবার বসেই একাধিক বৈঠক শেষ করা এটা কি বিধিসম্মত?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজি বলেন, একবারে একাধিক বৈঠক করছি—বিষয়টি তা নয়। ‍মূল বৈঠক হিসেবে একটি নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করছি। আর দীর্ঘদিন অনেক বিষয় অনিষ্পত্তি ছিল, আমরা সেগুলো নিষ্পত্তি করেছি। এটা করতে সময় লাগে না। এক-দুই মিনিটে হয়ে যায়। এগুলো উপস্থাপন করেই আমরা নিষ্পত্তি করে দেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত দশম সংসদেও সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এভাবে বৈঠক করেছে। সাবেক মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি ৫ বছরে ১০১টি বৈঠক করেছিল বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে। ওই সময় কখনও একদিনে একটি আবার কখনও একই বসায় দুটি করে বৈঠক হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট কমিটি শাখা সূত্রে জানা যায়। গতবারের ধারাবাহিকতায় এবারও হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে। তবে গতবার দুটি করে করলেও এবার তারা তিনটি বৈঠক করলো।

সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির মাসে কমপক্ষে একটি করে বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। তবে হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিসহ অন্যান্য কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয় কার্যপ্রণালি বিধিতে বলা হয়নি।

এদিকে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য সংসদ সদস্যরা যাতায়াত ভাতা ও দৈনিক ভাতা পেয়ে থাকেন। কোনও সংসদ সদস্য নিজের নির্বাচনি এলাকা থেকে এসে বৈঠকে অংশ নিলে সেই অনুযায়ী বিমান বা অন্যান্য যানবাহনের আসা-যাওয়ার ভাড়া পেয়ে থাকেন। এইসঙ্গে আগে-পরে মিলিয়ে ৫ দিনের মতো নির্ধারিত হারে দৈনিক ভাতা পেয়ে থাকেন। অবশ্য সংসদ অধিবেশন চলমান থাকা ও না-থাকার সময় এই ভাতা কম-বেশি হয়ে থাকে। তবে, একইদিনে একাধিক বৈঠকে অংশগ্রহণ দেখিয়ে ভাতা উত্তোলনের কোনও সুযোগ নেই।

সংসদ সচিবালয়ের উপসচিব ও কমিটি সচিব ফয়সাল মোর্শেদ বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে—এই কমিটির কার্যক্রমকে অন্য কমিটির সঙ্গে মেলানো যাবে না। অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো একটি মিটিং হিসেবে দেখানো হলে, কার্যবিবরণী লেখা থেকে শুরু করে অনেক জটিলতা হয়। যার কারণে এটা করা হয়। তাছাড়া বছরের পর বছর অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা দরকার।

আগামী ১২ নভেম্বর পরবর্তী সময়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই দিন আইন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়ে আলোচনা হবে। দুটি পৃথক মন্ত্রণালয় হওয়ায় সঙ্গত কারণেই সেটাকে দুটি বৈঠক আকারে দেখাতে হবে।

শেয়ার করুন