টানা ২০ দিনের আন্দোলনের মাথায় ৩০ নভেম্বর বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার ঘোষণা এসেছে।তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, শুধু ঢাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য শর্ত সাপেক্ষে অর্ধেক ভাড়ার এই ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারি বাস মালিকরা। এর আগে সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাসে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার ঘোষণা আসে।
সরকারি বাসে অর্ধেক ভাড়ার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ)। কিন্তু বেসরকারি বাস মালিকদের অর্ধেক ভাড়া ঘোষণার বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হবে না। ফলে এতে আশ্বস্ত হতে পারছে না আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের যৌক্তিক দাবি, প্রজ্ঞাপনে অর্ধেক ভাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রজ্ঞাপনের দাবিতে বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভও করেছে শিক্ষার্থীরা।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শর্ত সাপেক্ষে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার ঘোষণা দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতে উল্যাহ। আজ বুধবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। কিন্তু প্রশান হচ্ছে, ঢাকা মহানগরী এলাকার বাইরে কোথাও অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হবে না কেন? রাজধানীতে বসবাসকারীদের তুলনায় মফস্বল এলাকার শিক্ষার্থীরা কি অধিক বিত্তশালী? বরং, তুলনামূলকভাবে তাদের অধিকাংশই অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশী দুর্বল পরিবারের সদস্য। আর এমন বাস্তবতায় অবশ্যই মালিক সমিতির হঠকারী ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে সারা দেশেই শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করি।
অন্যদিকে, অর্ধেক ভাড়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে মালিক সমিতি। শিক্ষার্থীদের নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়ার সুবিধা দেওয়া হবে। সরকারি, সাপ্তাহিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মৌসুমি ছুটির সময় অর্ধেক ভাড়া কার্যকর হবে না।এসব আবার কোন ধরনের প্রহসন? রাত ৮টার পর কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে কি শিক্ষার্থীরা গৃহবন্দী থাকবে? প্রাইভেট পড়াসহ কত প্রয়োজনেই তো তাদেরকে বাসা থেকে বাইরে যেতে হবে। তখন কি আবার ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হবে? পরিবহন মালিকদের কি জানা নেই যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীর পরিচয় বদলে যায় না! তাই অবাস্তব কোনো শর্ত জুড়ে না দিয়ে পরিবহন মালিকদের স্বচ্ছতার নীতিতে হাঁটতে শেখা উচিত।
কথা এখানেই শেষ নয়, অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত এসেছে, সেই ঘোষণা দেওয়ার এখতিয়ার পরিবহন সমিতিকে কে দিয়েছে? বিআরটিএ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ঘোষণা বিআরটিএ থেকে আসা উচিত। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ভাড়ার তালিকা হতে পারে। বাসে দুই তালিকা ঝোলাতে সমস্যা হলে এক তালিকাতেই ছাত্রদের জন্য আলাদা কলাম করে ভাড়া উল্লেখ করে দিলেই সমস্যা চুকে যায়।তাছাড়া ভোক্তারা যেন অতিরিক্ত দামের শিকার না হন, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। তাই পরিবহন মালিক সমিতিকে তাদের ঘোষণা লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে দিতে বাধ্য করতে পারে বিআরটিএ। তারপর তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।
লেখক : কবি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক