এইচএসসিতে ৫টি এবং আলিমে একটি বিষয়ের মাধ্যমে আজ শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর পরীক্ষাটি হয়নি। শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছিল ‘অটোপাশ’। একই কারণে এবারও তা যথাসময়ে নেওয়া হয়নি। সাধারণত প্রতিবছর এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেই হিসাবে ৮ মাস পরে পরীক্ষা শুরু হলো। অন্যান্য বছর পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল দেওয়া হলেও এবার এক মাস পর দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ইতোমধ্যে টিকা দেওয়া হয়েছে। এরপরও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম আমিরুল ইসলাম মত ও পথকে বলেন, পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের নিজ আসনে বসতে হবে। যৌক্তিক কারণে কারও দেরি হলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও বিলম্ব হওয়ার কারণ রেজিস্টারে উল্লেখ করে প্রবেশ করতে হবে। কেন্দ্রসচিব এসব পরীক্ষার্থীর তালিকা প্রতিদিন সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাবেন।
পরীক্ষা উপলক্ষ্যে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় সর্বমোট ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৩০ জন অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে অংশ নিচ্ছে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ১৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫ লাখ ৬৩ হাজার ১১৩ এবং ছাত্রী ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৪ জন। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ১৪৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬১ হাজার ৭৩৮ এবং ছাত্রী ৫১ হাজার ৪০৬ জন। এছাড়া এইচএসসি (বিএম/ ভোকেশনাল) পরীক্ষা দিচ্ছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬৯ জন। এতে ছাত্র ১ লাখ ৪ হাজার ৮২৭ এবং ছাত্রী ৪৩ হাজার ৬৪২ জন।
করোনা পরিস্থিতির বাস্তবতায় এইচএসসিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজসহ বিভিন্ন বিভাগে তিনটি করে নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা হচ্ছে। বাংলা-ইংরেজির মতো আবশ্যিক বিষয়ে পরীক্ষা হবে না। মাদ্রাসায় আলিমে অবশ্য কিছু আবশ্যিক বিষয়েও পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। একই প্রক্রিয়া এইচএসসির (বিএম) ক্ষেত্রেও নেওয়া হয়েছে। এই পরীক্ষা নিচ্ছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। মাদ্রাসায় আজ সকালে কুরআন মাজিদ পরীক্ষা হলেও এইচএসসিতে উভয় বেলা পরীক্ষা আছে। এতে সকালে পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্র আর বিকালে সাধারণবিজ্ঞান এবং খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান (রসায়ন-তত্ত্বীয়) প্রথম পত্র, সাধারণবিজ্ঞান এবং খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান (জীববিজ্ঞান-তত্ত্বীয়) প্রথমপত্র, খাদ্য ও পুষ্টি প্রথম পত্র, লঘু সংগীত (তত্ত্বীয়) প্রথম পত্র।
এসএসসির মতোই এই পরীক্ষাও হচ্ছে সংক্ষিপ্ত (কাস্টমাইজড) সিলেবাসে। অনুরূপভাবে ১০০-এর পরিবর্তে ৫০ নম্বরে নেওয়া হচ্ছে পরীক্ষা। তবে পরীক্ষায় প্রশ্নের বিকল্পসংখ্যা আগের মতোই থাকছে। যেমন: বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের আগে ৮টি সৃজনশীল প্রশ্নের মধ্যে ৫টির উত্তর দিতে হতো। এখন ৮টির মধ্যে ২টির উত্তর দিতে হবে। মানবিক এবং বিজনেস স্টাডিজে ১১টির মধ্যে উত্তর করতে হবে ৩টি। এমসিকিউ-এর ক্ষেত্রে মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজে ৩০টির মধ্যে ১৫টি আর বিজ্ঞানে ২৫টির মধ্যে ১২টির উত্তর করতে হবে। পরীক্ষার সময় তিন ঘণ্টার পরিবর্তে দেড় ঘণ্টা। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সময় বেশি পাচ্ছে।
বিজ্ঞানে ২৫ নম্বরের ব্যাবহারিক, ২৫ নম্বরের এমসিকিউ এবং ৫০ নম্বরের সিকিউ প্রশ্ন হতো। আর মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজে ব্যাবহারিকবিহীন বিষয়ে ৭০ নম্বরে সিকিউ ও ৩০ নম্বরে এমসিকিউ পরীক্ষা হতো। এবারও নির্ধারিত পূর্ণমানের মধ্যে শিক্ষার্থী যা পাবে, সেটা শতভাগে রূপান্তর করা হবে। প্রত্যেক বিভাগে ৩টি করে বিষয়ের পরীক্ষা হচ্ছে। বাকি বিষয়ে জেএসসি এবং এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বরের প্রবণতা দেখে নম্বর দিয়ে এইচএসসি ও সমমানের ফল দেওয়া হবে। এ বছরও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিদেশের আটটি কেন্দ্রে এইচএসসি/সমমান পরীক্ষা আয়োজন করা হচ্ছে। এর মধ্যে জেদ্দায় ১১৪, রিয়াদে ৭৪, ত্রিপলিতে ২, দোহায় ৭৯, দুবাইয়ে ২৬, বাহরাইনে ৫৮, সাহাম ও ওমানে ১৯ জনসহ ৪০৬ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন।
পরীক্ষা সামনে রেখে ১৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল। এতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। কেউ যদি এর পরে আসে তবে তাকে গেটে রেজিস্টারে পরিচয় ও দেরি হওয়ার কারণ উল্লেখ করে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের সেট নির্বাচনকেন্দ্রে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্রের মধ্যে কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। শুধু কেন্দ্রসচিব মোবাইল ফোন (ছবি তোলা যায় না) ব্যবহার করতে পারবেন।