যানজট, রাজধানী ঢাকার নাগরিকদের সবচেয়ে বড় বিরক্তির কারণ। একদিকে চলছে উন্নয়নের মহা কর্মযজ্ঞ, অন্যদিকে রাস্তায় চলছে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের দৌরাত্ম্য। এই দুয়ে মিলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বাদ দিয়ে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ঢাকার যানজটে। এ ক্ষতি দেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশের সমান।
ঢাকা শহরে যানজটের কারণে বছরে জিডিপির সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে মাইনাস ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই সঙ্গে ঢাকার ওভার প্রবৃদ্ধির কারণে ক্ষতি হয় জিডিপির ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দিনে ‘ঢাকাস ওভার গ্রোথ অ্যান্ড ইস কস্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) পরিচালক আহমেদ আহসান। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এ সম্মেলন হচ্ছে।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে দ্বিতীয় দিনে প্রায় ১৫টির মতো গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
পিআরআই পরিচালক বলেন, বাংলাদেশের যে মানুষ শহরে বাস করে তার অধিকাংশ ঢাকায়। বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এর মধ্যে প্রধান শহরগুলোতে বাস করে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ। আবার ঢাকায় বাস করে ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর মাত্র ৫টি।
চীনের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৩৮ কোটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শহরে বাস করে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। সবচেয়ে বড় শহরে বাস করে ১ দশমিক ৮ শতাংশ, ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর রয়েছে ১০২টি।
ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৩৩ কোটি। এর মধ্যে শহরে বাস করে ৬ শতাংশ। সবচেয়ে বড় শহরে বাস করে ২ শতাংশ মানুষ। ১০ লাখের বেশি মানুষের শহর রয়েছে ৫৪টি।
পিআরআই পরিচালক আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অধিকাংশ ঢাকাকেন্দ্রিক। অন্যান্য শহরে উন্নয়নের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারেও অন্যান্য শহর পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অনেক। কিন্তু উৎপাদন হয় কম। দারিদ্র্য নিরসনের হার শহরে কম। গ্রামে বেশি। এই হার জাতীয় হারের চেয়ে গ্রামে বেশি। এছাড়া শ্রমিকদের মজুরি হারের প্রবৃদ্ধি শহরে কমছে। আগে যেখানে প্রবৃদ্ধির এই হার ১২ শতাংশ ছিল, এখন সেটি কমে ৮ শতাংশ হয়েছে।