ছাত্রদের আন্দোলনে মায়েরাও ঢুকে গেছে: হাছান মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ড. হাছান মাহমুদ
ফাইল ছবি

হাফ ভাড়া ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তাদের ৩০-৩৫ বছর বয়সী মায়েরাও ঢুকে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, এখন ছাত্রদের আন্দোলনে তো দেখা যায় ৩০/৩৫ বছর বয়সী ছাত্রের মায়েরাও ঢুকে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা দেখলাম, একটি রাজনৈতিক দলের ৩৫ বছর বয়সী নেত্রী, উনিও স্কুলছাত্রীর ড্রেস পরে সেখানে আন্দোলন করছেন।

আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

শিক্ষার্থীরা আজকেও আন্দোলনে নেমেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্ররা যে আন্দোলনে নেমেছে, সেজন্য আমরা সহানুভূতিশীল। তারা যে হাফ ভাড়ার জন্য আন্দোলন করছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বিআরটিসি বাসে হাফ ভাড়া সারাদেশের জন্য কার্যকর করেছেন। বেসরকারি বাস মালিক সমিতি ঢাকায় কার্যকর করেছে।’

তিনি বলেন, শুধু শিক্ষার্থী নয়, নিরাপদ সড়ক আমরা সবাই চাই। সেই দাবির প্রতি আমাদেরও সমর্থন আছে। তাই বলে রাস্তাঘাট আটকে আন্দোলন করা কতটুকু যৌক্তিক, অন্য মানুষের ভোগান্তিতে ফেলে আন্দোলন করা কতটুকু যৌক্তিক- সেই প্রশ্নও থেকে যায়।

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, গতকাল আমি টেলিভিশনে কয়েকটি মুখ দেখলাম, ওদেরকে মনে হলো না তারা স্কুলের ছাত্র বা ছাত্রী। তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদরা ঢুকে গেছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সেখানে ঢুকে গেছে। সুতরাং ছাত্রদের অনুরোধ জানাবো, তাদেরকে যাতে কেউ রাজনৈতিক ক্রীড়ানক হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য সতর্ক থাকার জন্য।

খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মৃত্যুর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, খুলনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মৃত্যু অত্যন্ত অনভিপ্রেত, দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্তাধীন। আমি মনে করি এর সুষ্ঠু তদন্ত হবে। তদন্তে নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে তার কোনো রোগ ছিল কি না, হার্ট ডিজিজ ছিল কি না, অন্য কোনো রোগ ছিল কি না। যে অভিযোগ এসেছে, তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়েছে, এরপর তিনি বাসায় গিয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে মারা গেছেন। সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে হার্ট অ্যাটক না স্ট্রোক।

তিনি বলেন, অভিযোগ যেহেতু এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কয়েকজন ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কারও করেছে। এ মুত্যু দুঃখজনক, অনভিপ্রেত। যদি কেউ দায়ী হয়, তদন্তে যদি সেটি বেরিয়ে আসে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সরকার আইন অনুযায়ী যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু কারও যদি বাগবিতণ্ডার পর হার্ট অ্যাটাকে বা স্ট্রোকে মৃত্যু হয় সে জন্য তদন্ত হওয়ার আগে, ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে উদঘাটিত হওয়ার আগে সেই বাগবিতাণ্ডাকেই দায়ী করা সেটি কতটুকু যৌক্তিক সেই প্রশ্নও থেকে যায়।

মানবিকতা দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আইনমন্ত্রী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার প্রতি যে মানবিকতা প্রদর্শন করা হয়েছে, সেটির জন্য বিএনপি সরকারকে ধন্যবাদও জানায়নি। বরং প্রতিনিয়ত বিষেদগার করছে। খালেদা জিয়া জন্ম তারিখ বদলে ১৫ আগস্ট কেক কাটেন। ক্ষমতায় থাকাকালে নিজের পুত্রের নেতৃতে গ্রেনেড হামলা করেছিলেন। এরপরেও প্রধানমন্ত্রী যে মানবিকতা দেখিয়েছেন, সেটি অতুলনীয়। সেটির প্রশংসা তারা করছে না। খালেদা জিয়ার দুই দফা ক্ষমতার থাকার সময় কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ওপর এ ধরনের মানবিকতা দেখিয়েছেন কি না, সেই উদাহরণটা দেখাক। সেটি তারা বলতে পারছেন না।

মন্ত্রী আরও বলেন ,আমরা চাই খালেদা জিয়া সুস্থ হোক, আল্লার কাছেও প্রার্থনা করি। আশা করছি, তিনি খুব সহসা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন। বিএনপির দাবি রাজনৈতিক। কোনো ইস্যু তৈরি করতে না পেরে মাঠ গরম করার জন্য তারা নানাভাবে কথা বলছে। তারা তো জনগণের জন্য রাজনীতি করে না। তাদের রাজনীতি পুরোটাই আবর্তিত হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে আর তারেক রহমানের শাস্তি নিয়ে। এর বাইরে তারা যেতে পারছেন না, এটি তাদের জন্য দুঃখজনক।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ওরা তো শুধু লন্ডনে পাঠাতে চায়, যেখানে তারেক রহমান আছে। ডাক্তার বাবুও প্রেস কনফারেন্সে তাই বলেছেন। পাশাপাশি আরও দুটি দেশের নাম বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি, সেখানে গেলেও রাজনীতি করতে সুবিধা হবে। কারণ সেখান থেকেও তো দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়। তারা যেভাবে দাবি-দাওয়া করছেন, সেটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এর মধ্যে দুরভিসন্ধি আছে।

শেয়ার করুন