বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া আমার মতো অনেক পাকিস্তানি সমর্থন করে

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাত্তরে গণহত্যা চালানোর ঘটনায় অনেক পাকিস্তানি বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি সমর্থন করেন বলে জানিয়েছেন হুসেন হাক্কানি, যিনি পাকিস্তানের দূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ছিলেন।

বর্তমানে হাডসন ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের পরিচালক হুসেন হাক্কানি রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে হাক্কানি বলেন, এই দাবি সবার, যারা বিশ্বাস করে সমষ্টিগত ক্ষমাপ্রার্থনা কষ্টমোচন করে এবং দুই দেশের মধ্যে ভুলে ভরা অতীতকে পেছনে ফেলে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড পিস কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরি, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গো চক টং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

তার কৈশোরে করাচিতে প্রথম ও শেষবার বঙ্গবন্ধুকে দেখে তার ভক্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে হাক্কানি বলেন, ১৯৭০ সালে জাতীয় নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। করাচি ন্যাশনাল পার্কের জনসভায় পশ্চিম পাকিস্তান ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা, অধিকার, গণতন্ত্র ও নায্যতার দাবিতে বঙ্গবন্ধু সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

হাক্কানি বলেন, যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন, আমি নিশ্চিত, তিনি পাকিস্তানকে বাংলাদেশের ওপর ১৯৭১ সালে অত্যাচার চালানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলতেন। আমার মতো আরও অনেক পাকিস্তানিও এটা সমর্থন করে।

এর আগেও একাত্তরের হত্যাকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত ৩১ মার্চ ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাস এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক বলেন, পাকিস্তানের জনগণের উচিত তাদের সরকারকে আহ্বান করা, যাতে তারা বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত সব ধরনের নির্যাতনের জন্য ক্ষমা চায়। ব্রাসেলসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহাবুব হাসান সালেহর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

বিশ্ব শান্তি কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার হার, মাথাপিছু আয় ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সালের আগে বাংলাদেশ ভারতের অংশ ছিল এবং ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের অংশ। এ থেকে বোঝা যায় স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মহান পিতার যোগ্য কন্যা অভিহিত করে হাক্কানি বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যাদের পরিবারকে কেড়ে নেওয়া হয়, তাদের মধ্যে সবাই সেই কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করে মা-বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা এবং শেখ হাসিনার কর্মের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যার ভেতরে ও সীমান্তে কোনো সহিংসতা নেই।

বক্তব্যে জাতির পিতার অসহিংস নীতির প্রসঙ্গ এনে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সহিংসতায় বিশ্বাস করতেন না। ১৯৭২ সালে দেশে ফেরত আসার পর ভারতের সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন। পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও স্থাপন করেছিলেন তিনি।’

বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, এই বিচার করার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ যাতে ভবিষ্যতে সংঘটিত না হয় সে বিষয়ে অপরাধীদের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু দক্ষিণ এশিয়ার সেরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব

বঙ্গবন্ধুকে শুধু বাঙালি জাতির নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার সেরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে মনে করেন হুসেইন হাক্কানি। তিনি বলেন, মহাত্মা গান্ধী বা নেলসন ম্যান্ডেলার মতো বঙ্গবন্ধু যা বিশ্বাস করতেন, সেটা অর্জনের জন্য তার জীবনের এক পঞ্চমাংশ সময় তিনি জেলে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা বলা হয়। কিন্তু আমি বলবো, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা রাজনৈতিক নেতা।

শেয়ার করুন