বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস ও কিছু প্রত্যাশা

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ-ভারত
ফাইল ছবি

আজ সেই ৬ ডিসেম্বর। যে ৬ ডিসেম্বরে ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তার মর্যাদা ঘোষণা করেছিল। বাংলাদেশের জন্য এই দিনটি ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় দিন। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে দুই দেশ একসঙ্গে এই মৈত্রী দিবস পালন করছে। উৎসবের অংশ হিসেবে দিল্লি ও ঢাকা বাদে ১৮টি দেশে যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ও ভারত।

পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক শাসনের নিষ্পেষণে নিষ্পেষিত হয়ে পূর্ব বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যখন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তখন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও তার সরকার যে সহায়তা করেছিল তা বাংলার মানুষ কখনো ভুলবে না। প্রায় এক কোটি পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া এবং সামরিক সহায়তা প্রদানসহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মিসেস গান্ধী যে ভূমিকা রেখেছিলেন সেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছিল। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীকে ফেরত নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে মিসেস গান্ধী যে উদারতা দেখিয়েছিলেন তা নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের ক্ষেত্রে খুব কমই দেখা যায়।

universel cardiac hospital

গত এক যুগে দুই দেশের সম্পর্ক একটি বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিশেষ করে ছিটমহল সমস্যার সমাধানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান এসেছে গত ১২ বছরে। বিভিন্ন প্রকল্পে ভারতের সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক দল যেমন ভারতে তাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রদর্শন করে, ঠিক তেমনিভাবে ভারতীয় সংস্কৃতিক দল প্রায়শই বাংলাদেশের মানুষের সামনে তাদের কার্যক্রম উপস্থাপন করে। এর মাধ্যমে দুই দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একটি শক্তিশালী সেতুবন্ধ রচিত হয়েছে।

দুই দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভারত সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য যে বৃত্তি চালু করেছে সেটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলেছে। তবে দুটি দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হলেও বেশ কয়েকটি বিষয়ে এখন পর্যন্ত ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এবং বর্ডারে হত্যা। তিস্তার পানি চুক্তির ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতার কারণে তা করা সম্ভব হচ্ছে না এই মর্মে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিবৃতি প্রদান করলেও আমাদের সবার মনে রাখা উচিত দুই দেশের সম্পর্ককে উন্নত করতে হলে ভারত সরকারের উচিত যে কোনো প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়ে এই চুক্তি সম্পন্ন করা। এই চুক্তি হলে তা শুধু দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, তিস্তার পানির অভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জনগণকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।অন্যদিকে বর্ডারে হত্যা সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য দুটি দেশের উচ্চপর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও সময়ের ব্যবধানে মাঝে মাঝে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড দুটি দেশের সম্পর্ককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে বিধায় এ হত্যাকাণ্ড কমানো উচিত।

১৯৭১ সালের সেই ৬ ডিসেম্বর ৫০ বছর পরও বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন। আজ এত বছর পর বোধ হয় সেই ৬ ডিসেম্বরকে নতুন করে স্মরণ করার সময় এসেছে। কারণ বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের সম্পর্কটা অনেক মজবুত ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে আছে। তবে, যেসব বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, সে বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে এ সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ই হতে পারে এবারের মৈত্রী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য।

শেয়ার করুন