তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানোর পর এবার সংসদ সদস্য পদ হারানোর ঝুঁকিতে পড়ছেন ডা. মুরাদ হাসান। জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) থেকে নির্বাচিত এই এমপিকে ইতোমধ্যেই জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দিতে কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদে রয়েছেন।
অন্যদিকে ডাক্তার মুরাদকে দলীয় পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ফলে ডাক্তার মুরাদের সংসদ সদস্য পদ এখন সংকটে রয়েছে।
তবে সংবিধানে এ বিষয় নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হয়ে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ওই দল হতে পদত্যাগ করলে অথবা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোটদান করলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
এদিকে, সংবিধানের ৬৬(ঘ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দণ্ডিত হন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এখন যে দল থেকে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন সেই দল যদি তাকে বহিষ্কার করে, এক্ষেত্রে তার সংসদ সদস্য পদ কী হবে এটা হল মূল প্রশ্ন। এখানে সংবিধানের ৭০ এবং ৭২ অনুচ্ছেদে যেটা আছে সেখানে বলা হয়েছে- যদি তিনি পদত্যাগ করেন- তার মানে যদি তিনি সেই পদে না থাকেন। এই না থাকাটা স্বেচ্ছায় করতে হবে, না কি দল থেকে করতে হবে? এটা কিন্তু সংবিধানে বলা নেই।
তিনি বলেন, কেউ কেউ এই কারণে এটা নিয়ে বিতর্ক করতে পারেন। এই পদত্যাগ বলতে স্বেচ্ছায় বোঝায়। কিন্তু স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় এটা প্রশ্ন না। কারণ যে দল আপনাকে নমিশন দিয়েছিল, যখন আপনি দল থেকে চলে গেলেন- বিধান অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবেই সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। এর আগে কিন্তু দুইজন সংসদ সদস্যের ব্যাপারে এই ঘটনা ঘটেছিল। তারা কিন্তু সে সময় দল থেকে চলে গিয়েছিলেন এবং এটা সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত আসে। এরপর বিষয়টা এভাবে এসেছে- যদি কাউকে সেই দল থেকে বহিষ্কার করে সেক্ষেত্রে তার সংসদ সদস্যপদ থাকছে না। কিন্তু আপনি যদি লিগ্যাল আরগুমেন্টে ওই বিষয়ে কথা বলেন তাহলে আরগুমেন্টের একটা বিষয় বা লিগ্যাল ফাইট করতে পারবেন। তবে সেই ফলাফলটা কী আসবে সেটা এখনই বলা যাবে না।
মনজিল মোরসেদ বলেন, সংবিধানের স্পষ্টভাবে পদত্যাগের কথা বলা হয়েছে। আর এক্ষেত্রে ‘পদ’ আর ‘ত্যাগ’ এভাবে যদি বিশ্লেষণ করেন তাহলে তো তিনি আওয়ামী লীগের পদ থেকে চলে গেলেন। তাই তার এমপি পদ থাকে না।
তিনি আরও বলেন, পদত্যাগ বলতে সংবিধানে আসলে সেভাবে পরিষ্কারভাবে কিছু বলার নেই। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে, নাকি পাটির মাধ্যমে হতে পারে সে বিষয়টি পরিষ্কার করা উল্লেখ নেই। তবে উদাহরণ আছে দল থেকে কেউ বহিষ্কার হলে তার সংসদ সদস্যপদ থাকবে না।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, এখানে সংবিধানের অস্পষ্টতা আছে। তবে নৈতিক স্খলনের জন্য দল যদি তার সদস্যপদ খারিজ করে তাহলে সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। মুরাদকে মূলত বহিষ্কার করা হচ্ছে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান লিখিত। কিন্তু সবকিছুই তো আর লিখিত নাই। তাই দল যদি মনে করে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য, তাহলে তিনি এমপি থাকতে পারবেন না।
২০১৫ সালে হজ নিয়ে মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের সদস্যপদ হারানোর পর আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সংসদে গিয়ে ১৫ মিনিটের আবেগময় এক বক্তব্য দিয়ে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর তার সংসদ সদস্যপদ খারিজ করা হয়।
সম্প্রতি তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান এক সাক্ষাৎকারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান এবং তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক কথা বলেন। এছাড়া এর কিছু পরই প্রতিমন্ত্রী মুরাদের একটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যেখানে তিনি অশ্লীল ভাষায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেন। ফোনে চিত্রনায়ক ইমনকে তিনি বলেন, ঘাড় ধরে যেন মাহিকে তার কাছে নিয়ে যান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে ডাক্তার মুরাদের শাস্তির দাবি ওঠে।
এরপর সোমবার (০৬ ডিসেম্বর) রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ডা. মুরাদ হাসানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এবং তিনি তাকে আগামীকালের মধ্যে পদত্যাগ করতে বলেছেন। আমি আজ রাত ৮টায় তাকে বার্তাটি পৌঁছে দিই।
এদিকে আজ (মঙ্গলবার) ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে নিজ মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠান ডা. মুরাদ হাসান। মঙ্গলবার দুপুরে সাড়ে ১২টায় পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে তিনি সেটি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠান।