বিজয়ের মাস ডিসেম্বর: আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ফাইল ছবি

আজ ৮ ডিসেম্বর বুধবার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী বাহিনীর অবস্থান ঘিরে ফেলে মুহুর্মুহু আক্রমণ চালায়। পরাজিত হয় পাকিস্তানী বাহিনী। শত্রুমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এদিন সকাল ৯টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযুদ্ধের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর এস ফোর্সের অধিনায়ক তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধ হয়। ঐ যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৫ জন নিহত ও ১৪ জন বন্দী হয়। আখাউড়া উপজেলাকে হানাদারমুক্ত করার পর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ দক্ষিণ দিক থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। একই সঙ্গে মিত্রবাহিনীর ৫৭তম মাউন্টের ডিভিশন আখাউড়া-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেললাইন ও উজানিসার সড়ক দিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। শহরের চারপাশে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর শক্ত অবস্থানে থাকায় হানাদার বাহিনী পিছু হটতে থাকে।

universel cardiac hospital

তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় ৬ ডিসেম্বর রাজাকারদের সহায়তায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কেএম লুৎফুর রহমানসহ কারাগারে আটকে রাখা অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে পৌর শহরের কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদার বাহিনী।

এছাড়া শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা কলেজের হোস্টেল, অন্নদা স্কুল বোর্ডিং, বাজার ও গুদামসহ বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরদিন ৭ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে পালাতে থাকে। ৮ ডিসেম্বর বিনা বাধায় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রবেশ করে স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উত্তোলন করে। ফলে পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মূলত দুটি সেক্টরের অধীনে ছিলো। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বে কসবা, গঙ্গাসাগর ও আখাউড়া থেকে পশ্চিমে ভৈরব বাজার রেললাইন পর্যন্ত ছিল ২নং সেক্টরে এবং পূর্বে সিঙ্গার বিল থেকে উত্তরে হবিগঞ্জ পর্যন্ত ছিল ৩নং সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধ এখানে মূলত জনযুদ্ধে পরিণত হয়েছিল। সর্বস্তরের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী থেকে মুক্তি লাভ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে গড়ে তোলা হয়েছে কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ। এখানে ৫০ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল রয়েছে।

এদিকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঐতিহাসিক হানাদার মুক্ত দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্ত্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকারে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

শেয়ার করুন