একই দেশে দুই নীতি থাকা ঠিক না: মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

আজ ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের চুড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭১ সালের এইদিনে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর দখল মুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

দিবসটি উপলক্ষে আজ বুধবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলণের মধ্যদিয়ে কর্মসূচীর শুরু হয়। পরে চত্বর মঞ্চে মুক্ত দিবসের আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে এক মেয়র কটূক্তি করায় তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৬ থেকে ২৮ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোসহ ৩০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকারীদের কেন শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না। কেন তাদের আদর সোহাগ করা হচ্ছে। একই দেশে দুই নীতি, এটা তো ঠিক না, এর অবসান হোক।

তিনি আরও বলেন, তারা চেয়েছিল সরকার উৎখাত করতে। সরকার উৎখাত করতে কি মুক্তিযুদ্ধবিজড়িত স্থানগুলোতে ভাঙচুর করা লাগে, রেলস্টেশনে অগ্নিসংযোগ লাগে! আসলে সরকার নয়, তারা দেশের স্বাধীনতা বিনষ্ট করতে চায়।

মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শত্রু মুক্ত হয়েছিল, তখন কিছু লোক ছাড়া সবাই খুশি হয়েছিল। এই কিছু লোক কিন্তু আর কিছু লোক নাই। তারা কিন্তু এখন ডালপালা বিস্তার করে অনেক বড় হয়ে গেছে। তারা এখন আপনাদের ভেতরে ঢুকে আপনাদের কলিজার টুকরা হয়ে গেছে। তারা এখন জয় বাংলার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। তারা এখন জয় বাংলার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। তারা বলে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যাবে না। বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে, কেননা এখানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যাদের শিক্ষার মাধ্যম হচ্ছে উর্দু, আমরা এটা সাপোর্ট করতে পারি না। উর্দু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, থাকুক। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই কিন্তু বাংলাদেশে বাস করে যারা বাংলা ভাষাকে অশ্রদ্ধা করেন, যারা একুশে ফেব্রুয়ারির প্রতি শ্রদ্ধা রাখে না, যারা পহেলা বৈশাখের প্রতি শ্রদ্ধা রাখে না, তারা স্বাধীনতার শত্রুর, বাঙালির শত্রু, তথা এই বাংলাদেশের শত্রু। এই গণশত্রুদের বিরুদ্ধে আপনাদের সাবধান হতে হবে। এদের বিরুদ্ধে সাবধান হতে হলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একইসঙ্গে জনগণকেও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কারণ আমরা কখনোই এদেশকে স্বাধীন করতে পারতাম না যদি না এদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে ৭ কোটি ৪৫ লক্ষ মানুষ আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা না করত।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার ছাত্রের মিছিল বের হয়। তারা শহরের কেন্দ্রস্থল বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে হামলে পড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে। সেটি ভেঙে আগুন দেয়ার পাশাপাশি তারা আগুন দেয় শহরের রেলস্টেশন, আনসার ক্যাম্প, মৎস্য অধিদপ্তরে। হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে একজন নিহত হয়।

পরদিন মহাসড়ক অবরোধ করে পুলিশের ওপর হামলে পড়ে মাদ্রাসাছাত্ররা। তখন পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারায় পাঁচজন।

নিহত ব্যক্তিদের নিজেদের কর্মী দাবি করে ২৮ মার্চ হরতাল ডাকে হেফাজত। হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে ব্যাপক তাণ্ডব। বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সবগুলো স্থাপনায় ভাঙচুরের পাশাপাশি ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন।

হামলা চলে পৌরসভা কার্যালয়, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, গণগ্রন্থাগার, সংগীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিবিজড়িত ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’ ও মিলনায়তন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের অফিস, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি এবং সরাইলের খাটিহাতা হাইওয়ে থানায়।

শেয়ার করুন