বরিশালের হিজলা উপজেলার কলেজছাত্রী আসপিয়া ইসলামকে ঘরসহ পুলিশে চাকরির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এই তথ্য জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।
তিনি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ফোন দিয়ে জানিয়েছেন আসপিয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি আসপিয়ার স্থায়ী ঠিকানা এবং চাকরির জন্য তাকে সরকারি জমিতে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আর জেলা পুলিশের চলমান কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা অনুযায়ী তাকে চাকরির ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আসপিয়ার জন্য ঘর নির্মাণের লক্ষ্যে বিকেলে তাকে ও তার মাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাসজমি ঘুরে দেখেছি। বড়জালিয়া ইউনিয়নে কয়েক শতাংশ জমি পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে সেখানে আসপিয়ার জন্য ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে আসপিয়ার জন্য জমিসহ ঘরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, ‘পুলিশ কনস্টেবল পদে আসপিয়ার নিয়োগ বাতিল করা হয়নি। নিয়োগ আবেদনে তার স্থায়ী ঠিকানা ভুল উল্লেখ ছিল। বিষয়টি ভেরিফিকেশনে উঠে আসে।
তার চাকরি হবে না, এটা কখনও বলা হয়নি। যোগ্যতা অনুযায়ী যাতে সে নিয়োগ বঞ্চিত না হয় নিয়মের মধ্যে থেকে সেভাবে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনায় আত্মহারা আসপিয়া ও তার পরিবার। সন্ধ্যায় মুঠোফোনে আসপিয়া ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। আমার মতো একজন মানুষের সমস্যার বিষয়টি তার নজরে পড়েছে।
এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি আছে। চাকরি পেয়ে আমি দেশের সেবা করতে চাই।
সাত স্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও শুধুমাত্র স্থায়ী ঠিকানা (ভূমি) না থাকায় চলমান পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ হবে না বলে গত সপ্তাহে হিজলার কলেজ ছাত্রী আসপিয়া ইসলামকে জানিয়ে দিয়েছিল ওই থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া। চাকরিতে যোগদানের স্বপ্ন বুনতে থাকা পিতৃহীন আসপিয়া বিমর্ষ হয়ে পড়ে। সাহস করে গত বুধবার জেলা পুলিশ লাইনে রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামানের কাছে প্রতিকার চাইতে যান তিনি। নিয়মের বেড়া জালের কারণে আসপিয়াকে কোনো ভরসা দিতে না পাড়লেও সমবেদনা জানিয়েছেন ডিআইজি।
এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। শোরগোল পড়ে যায় ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। বিষয়টি নজরে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর। শেষ পর্যন্ত জমিসহ ঘর এবং যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন তিনি।
এর আগে ভূমিহীন আসপিয়া ইসলামের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের নেতারা। গণমাধ্যমের খবর দেখে ভূমিহীন আসপিয়াকে জেলার যে কোনো স্থানে ৫ শতাংশ জমি কিনে দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছেন জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন তাপস।
বাকেরগঞ্জের রোকনউদ্দিন ইসলামিয়া সালেহিয়া ডিগ্রি মাদ্রাসার শিক্ষক মো. নূর-ই আলম মিন্টুও আসপিয়ার চাকরির নিশ্চয়তার জন্য তার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে ৫ শতাংশ জমি দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন। এছাড়াও ইতালি প্রবাসী এক বাংলাদেশিও গত বৃহস্পতিবার রাতে আসপিয়াকে স্থায়ী ঠিকানার জন্য জমি কিনে দেয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন।
ন্যায্য অধিকার আদায়ে আইনি লড়াইয়ে আসপিয়ার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুপ্রীম কোর্টের দুইজন আইনজীবী। প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুনও যোগ্যতা বলে আসপিয়ার চাকরি না হলে অনশন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।