যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক অব্যাহত থাকবে: হাছান মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ফাইল ছবি

র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অগ্রহণযোগ্য, তবে এ ঘটনা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে অধিদপ্তর প্রকাশিত ‘মা ও শিশু’ বিশেষ সাময়িকীর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান তথ্য কর্মকর্তা শাহেনুর মিয়ার সভাপতিত্বে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।

universel cardiac hospital

তথ্যমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করে আসছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমনে দুই দেশের টেকনিক্যাল সহযোগিতায় আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপকৃত হয়েছে। কারণ সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিদের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক দমন করতে বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক প্রয়োজন। কিন্তু মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট যেভাবে র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তা অনভিপ্রেত, দুঃখজনক, অগ্রহণযোগ্য, অকার্যকর।

‘এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করার ঘটনা বাংলাদেশে আগে ঘটেছে কি না বা বহু পূর্বে ঘটেছে কি না সেটি আমার জানা নেই। কোনো পূর্ব যোগাযোগ ছাড়া হঠাৎ করে এভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী হয়েছে কি না সেটিও একটি বিষয়। আমরা আশা করব, আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের ‘সেন্টিমেন্ট’ অনুধাবন করতে সমর্থ হবে।

তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তাদের ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। কিন্তু মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনকারী ইসরায়েলের কোনো কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দেখা যায়নি। অনেক উন্নত দেশে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাবসায়িক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সম্পর্ক যুক্ত, সেখানে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আমরা দেখিনি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। জর্জ ফ্লয়েডকে যেভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে গলার ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে হত্যা করা হয়েছে, এমন ঘটনা বাংলাদেশে কখনো ঘটেনি। মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রচণ্ডভাবে, ক্রমাগতভাবে বছরের পর বছর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এবং তাদের পুলিশি হেফাজতে যে মৃত্যু হয় সেগুলো নিয়ে, গুয়ান্তানামো বে’তে বন্দিদের ওপর নির্যাতন নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও প্রতিবাদ হয়েছে, এখনো হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় অভিবাসীরা যখন বর্ডার ক্রস করার চেষ্টা করেছে, তখন তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে যেভাবে বছরের পর বছর মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে, সেটি অন্য কোনো দেশে হয়েছে কি না আমার জানা নেই। এ নিয়েও বিশ্বব্যাপী এবং খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও প্রতিবাদ হয়েছে, এখনো হচ্ছে।

মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনকারী মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা দেবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সেটি ভবিষ্যতের বিষয়, এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমরা মনে করি, এই ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা মনে করি, কিছু এনজিও ও ব্যক্তিবিশেষ ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন জায়গায় দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং তারা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্যান্য দেশেও ক্রমাগতভাবে অসত্য তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করে, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতেই এ ঘটনা ঘটেছে।

এ সময় ‘মা ও শিশু’ সাময়িকী প্রকাশের জন্য তথ্য অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানান এবং এই সাময়িকী প্রকাশের পাশাপাশি অনলাইনেও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

‘চিরঞ্জীব মুজিব’ চলচ্চিত্র নিয়ে মিট দ্য প্রেস

এদিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে নির্মিত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা নিবেদিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ নিয়ে মিট দ্য প্রেসে অংশ নেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ প্রজেকশন হলে চলচ্চিত্রটির পরিচালক ও সংলাপ রচয়িতা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক আহমেদ, সৃজনশীল পরিচালক জুয়েল মাহমুদ ও প্রযোজক লিটন হায়দার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ চলচ্চিত্র নির্মাণে সময় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং অন্য ভাষাভাষীসহ কোটি কোটি মানুষ গ্রন্থটি পড়েছে। কিন্তু এটি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়নি। এই চলচ্চিত্রের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। চলচ্চিত্রের পরিচালক নজরুল ইসলাম এবং প্রযোজক লিটন হায়দারকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।’ সচিব মো. মকবুল হোসেন চলচ্চিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

চলচ্চিত্রটির পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৩ জুন ২০২১ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্রটির ৩টি পোস্টারে স্বাক্ষরের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। ৩১ ডিসেম্বর দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

শেয়ার করুন