দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপের তথ্য বলছে, মোট জনসংখ্যার অন্তত ৩ কোটি মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আছেন বা মানসিক রোগে আক্রান্ত। যাদের ৯২ শতাংশই চিকিৎসার বাইরে। বয়স্কদের ১৬ শতাংশের বেশি এই সমস্যায় ভুগছেন বলে জরিপে উঠে এসেছে।
অন্যদিকে দেশে এই বিষয়ে চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ৩০০। আর সাইকোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিস্ট, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত সব মানুষ মিলে সংখ্যা হাজারেরও কম।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ফর মেন্টাল হেলথ কার্যক্রমের সূচনা ও অবহিতকরণ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে জানানো হয় এসব তথ্য।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভাগের মহাপরিচালক এনায়েতুল্লাহর সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ছিলেন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সচিব আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র রোবেদ আমিন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মানসিক চিকিৎসাসেবা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা শেষ করে কাজ করছেন এমন চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ৩০০। আর সাইকোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিস্ট, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত সব মানুষ মিলে তাদের সংখ্যা হাজারের কম। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে যে জরিপ হয়েছে তা অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যায়, বয়স্কদের ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যায় আক্রান্তের হার ১৬ দশমিক ৮ ভাগ।
অধ্যাপক হেলাল জানান, ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে অন্তত তিন কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় আছেন বা মানসিক রোগে আক্রান্ত। এদের চিকিৎসা দিচ্ছে মাত্র ৩০০ জন চিকিৎসক।
এই চিকিৎসক বলেন, অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এর শতকরা ৯২ জন রয়েছেন চিকিৎসার আওতার বাইরে। অন্যদিকে শতকরা ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুও মানসিক রোগে ভুগছে বলে জরিপে উঠে এসেছে। যাদের ৯৪ শতাংশই কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বড় ধরনের অর্জন হিসেবে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন, ২০১৮’কে উল্লেখ করেন অধ্যাপক হেলাল। তাতে মানসিক স্বাস্থ্যনীতিতে সমতা ও ন্যায়বিচার, সমন্বিত সেবা, প্রমাণভিত্তিক পরিচর্যা এবং মান নিশ্চিতকরণের বিষয়গুলো রয়েছে। এ নীতিমালার ওপর ভিত্তি করেই মানসিক স্বাস্থ্যের কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে।
হেলাল বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যে আমাদের অর্জন নেহাত কম নয়। ২০২০ সালে আমরা একটি রূপরেখা (ম্যাপিং) করেছিলাম। সেখানে এসেছে, ২২৬টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের কর্মকৌশলটি সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে বছরে গড়ে ১০ হাজার জনেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। আর দেশে গুরুতর মানসিক রোগীদের মাঝে ৪২ শতাংশই কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, ব্রেইন টিউমার, লিভার, কিডনি ও হার্টফেল অন্যতম।
এতে আরও বলা হয়, করোনাকালীন মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এমনকি করোনার প্রথম বছরেই সারাদেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি অফ অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজ অর্ডারের সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ হোসাইন একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন সায়মা ওয়াজেদ। বাংলাদেশের হেলথ প্রফেশনাল বা থেরাপিস্টদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের হলিস্টিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বল্প সম্পদের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।