১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার ওই তালিকায় বাংলাদেশের বিশেষ বাহিনী র্যাব ও এ বাহিনীর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার নামও রয়েছে। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনলগ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত ও ব্যথিত হয়েছি এবং তাদের এ সিদ্ধান্তকে একপেশে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হচ্ছে।
আমরা মনে করি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বস্তুনিষ্ঠভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বরং তারা অতিরঞ্জিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের কোনো সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না। করলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিশেষ করে র্যাব একটি এলিট ফোর্স হিসেবে কাজ করছে, সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ দমনে এই বাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে কাজ করছে। এ বাহিনীর কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় এ বাহিনীর অন্তত সাতজন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে। সেইসঙ্গে কোনো অভিযোগ থাকলে বাহিনী নিজে কিংবা মন্ত্রণালয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তাছাড়া যাদের দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন বিভিন্ন সিটিতে রাস্তায় নামে, তাদের অন্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের বক্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে? জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, যা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে । অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার সূচকগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতার কথা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার উল্লেখ করছে, খোদ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিকে আমেরিকা সফরে বাধা দেওয়া হয়।
যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, আইনের শাসনে বিশ্বাস করে, তাদের একটা কর্তব্য থাকে- সেটা হচ্ছে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা এবং যাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাদের আত্মপক্ষ বক্তব্য শোনার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ না দিয়েই এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে! তাই আমাদের বিশ্বাস, মার্কিন প্রশাসন শিগগিরই তাদের এই অযৌক্তিক ও একপেশে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।