খ্রিস্টজন্মের প্রায় ৫১০ বছর আগে তত্কালীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্র এথেন্সে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যকে কেন্দ্র করে এক ব্যাপক দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছিল। এর আগে সেখানে ছিল হিপ্পিয়াস নামে এক অত্যাচারী শাসক ও তাঁর পিতার দীর্ঘ ৫০ বছরের শাসন। হিপ্পিয়াসকে এথেন্সবাসী তাদের নগরী থেকে বহিষ্কার করেছিল। নগর রাষ্ট্র এথেন্সের সুষ্ঠু প্রশাসন ও নাগরিকদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে তখন সর্বস্তরে এক বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। ঝঞ্ঝাময় সেই পরিস্থিতিতে এথেন্সের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন বিশিষ্ট নাগরিক ও সমাজ চিন্তাবিদ ক্লিসথেনেস। এথেন্সে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তখন তিনি বেশ কিছু আমূল সংস্কারের প্রস্তাব করেন, যা তাত্ক্ষণিকভাবে জনসমর্থন পেয়েছিল। সেই সব মৌলিক পরিবর্তনের কারণে নগর রাষ্ট্র এথেন্সে ক্রমে ক্রমে জনগণের অধিকার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হতে থাকে এবং প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সর্বোপরি জনপ্রতিনিধিত্ব কার্যকর হয়ে ওঠে। তাতে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এথেন্সবাসী গণতন্ত্রের সুবাতাস অনুভব করতে শুরু করে। সে কারণেই তারা ক্লিসথেনেসকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতিষ্ঠাতা কিংবা পিতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বিনির্মাণে ক্লিসথেনেস তাঁর পূর্বসূরি এবং বিশিষ্ট চিন্তাবিদ সলোন উদ্ভাবিত কিছু মৌলিক আইন ও নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে গণতন্ত্র প্রবর্তনের জন্য সঠিক প্রতিনিধিত্বমূলক কিছু রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। ক্লিসথেনেস এথেন্সের বিভিন্ন গ্রামকে মোট ১০টি রাজনৈতিক জোনে রূপান্তরিত করে সেখান থেকে জনপ্রতিনিধি বাছাই ও বিচার বিভাগে জুরি পাঠানো থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সংসদের আলোচ্যসূচি প্রণয়নেরও সুপারিশ করেন। সেই থেকে বিশ্বে গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার সম্মুখযাত্রা শুরু হয়েছিল। এবং বিগত আড়াই হাজার বছরের অধিক সময় ধরে বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে বিভিন্ন সমালোচনার মুখেও একটি নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক পদ্ধতি হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র বহাল তবিয়তে টিকে রয়েছে।
যুক্তরাজ্য বা ব্রিটেন এবং ফ্রান্স ইউরোপে রাজতন্ত্র ও ঔপনিবেশিকতার ভরকেন্দ্র হলেও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের কাছে উনবিংশ শতাব্দীর সূচনা থেকেই সেগুলো ক্রমে ক্রমে শক্তি হারাতে শুরু করে। আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশে অভ্যুদয় ঘটতে থাকে নতুন নতুন স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের। এ ক্ষেত্রেও ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা ও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ অনেক গণতন্ত্রকামী মানুষকে উল্লিখিত সময়ের আগেই রাজনৈতিকভাবে মুক্তির পথ দেখিয়েছে। আজকের গণতান্ত্রিক ও মুক্তবিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণার মূল দলিলটি (United States Declaration of Independence) প্রণয়ন ও প্রকাশ করেছিলেন (৪ জুলাই, ১৭৭৬) বিশিষ্ট মার্কিন চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক নেতা টমাস জেফারসন। তিনি শুধু স্বাধীনতা ঘোষণার মূল দলিলটিই প্রণয়ন করেননি, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য দেশের সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। জেফারসন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে পৃথক করার জন্য ‘দ্য ভার্জিনিয়া স্ট্যাটুট ফর রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ প্রণয়ন করেছিলেন ১৭৮৬ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের অধীনে তিনি সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে কাজ করেছেন স্বাধীনতার পর। তারপর যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেফারসন ১৮০১ থেকে ১৮০৯ পর্যন্ত দুই টার্মে ক্ষমতায় ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন, প্রেসিডেন্ট জেমস মেডিসন (যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণেতা) ও প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের মতো নেতারা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠাতা। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাঁরা। কিন্তু ক্ষমতা দখলের রাজনীতি কিংবা কায়েমি স্বার্থ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি গণতন্ত্রের পথ থেকে ইদানীং বিচ্যুতি ঘটাচ্ছে অনেককেই। বিভিন্ন নেতা সংসদ কিংবা সর্বোচ্চ আইনসভা ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব না করে লেজুড়বৃত্তি এবং দালালিতে আত্মনিয়োগ করেছেন। তাতে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিক্রি করা হচ্ছে জনগণের অধিকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিজ স্বার্থে। এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে এখন রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সরকারের মধ্যে আধিপত্য কিংবা কর্তৃত্ববাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সর্বত্র অভিযোগ উঠছে। তাতে রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক দিক থেকে জনগণ তার প্রকৃত শক্তি হারিয়ে শোষণ, অপশাসন, বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থা এখন বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ বলে পরিচিত পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।
পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের আধিপত্য বা কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য বলতে শুরু করেছে যে এখন আর আদর্শ নয়, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত শুরু হয়েছে সাম্যবাদ কিংবা সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদকে কেন্দ্র করে। আজকের চীনকে সম্পূর্ণভাবে সাম্যবাদী আদর্শে বিশ্বাসী একটি দেশ বলা যায় না। কারণ বর্তমানে সেখানে রয়েছে অসংখ্য সম্পদশালী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবিশেষ, যারা শুধু মুক্তবাজার অর্থনীতিতেই বিশ্বাসী নয়, তারাও পুঁজির সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে চায় দারিদ্র্য বিমোচন এবং দেশের সার্বিক সমৃদ্ধির জন্য। সামরিক ও অসামরিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করতে চায় পরোক্ষভাবে সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী দেশগুলোর সঙ্গে। এ কথা অনস্বীকার্য যে বর্তমানে চলছে বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনৈতিকভাবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এক অঘোষিত লড়াই। সে লড়াই বা প্রতিযোগিতা মার্ক্সবাদী অর্থনীতির নিরিখে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা এখন বিবেচনা করে দেখতে হবে। এত বছর চীনের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়কে নিয়ে পশ্চিমারা তেমনভাবে কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এখন তারা চীনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং তাদের ওপর নির্যাতন নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছে। কৌশলগতভাবে এখন বলছে, কারণ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে তারা তাদের আধিপত্য কিংবা কর্তৃত্ব বজায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে অসামান্য অগ্রগতির বিরুদ্ধে। তা ছাড়া চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়ার স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে ব্যাপকভাবে খনিজ সম্পদ কিনতে শুরু করেছে। আফগানিস্তান তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় তার একই জোটভুক্ত পশ্চিমা জগৎ ও অন্যরা এখন অর্থনৈতিক ও সামরিক ইস্যুর পাশাপাশি চীনও এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্ন নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ১১০টি তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নিয়ে তার নিজ দেশে গণতন্ত্রের ওপর একটি সম্মেলন ডেকেছে। অথচ সুইডেনভিত্তিক নীতি-নৈতিকতাবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স’ তার ২০২১ সালের ‘বৈশ্বিক গণতন্ত্র পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে গণতন্ত্র থেকে পিছু হটার তালিকায় নাম প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের। ভারত ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেছে গবেষণা ইনস্টিটিউটটি। অথচ তেমন একটি অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র তার আহৃত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে ভারতকে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় এবং অশ্বেতাঙ্গ এশীয়, মুসলিম ও লাতিনদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে যে সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী হামলা চলছে, যুক্তরাষ্ট্র তার কতটুকু প্রতিকার করতে পেরেছে? উইঘুরদের সম্পর্কে কথা বলার আগে যে বিষয়গুলো ভেবে দেখা উচিত ছিল। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এখন মানুষের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের প্রশ্নে হঠাৎ করে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০১৬ থেকে চার বছরের শাসনামলে গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার এবং নির্বাচন নিয়ে কী ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী? ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ’-এর স্লোগানের পেছনে কোন ধরনের গণতন্ত্র চর্চা ও গণতান্ত্রিক শাসন চলছিল যুক্তরাষ্ট্রের, তা ভেবে দেখা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক শাসনের প্রেক্ষাপটে ৬ জানুয়ারি ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন পরিষদ, ক্যাপিটল হিল, কিভাবে এবং কেন আক্রান্ত হয়েছিল, তা এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে। গণতান্ত্রিক বা মুক্তবিশ্বের নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবস্থা নিতে হবে তার ঘর থেকেই প্রথম। নতুবা নিজের দুচোখ বন্ধ করে চীনের উইঘুর সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য হঠাৎ করে কাঁদতে বসা প্রহসনের মতো শোনাবে। প্রশ্ন উঠবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি হোয়াইট হাউসের সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের আচরণ নিয়ে। এত কিছুর পরও ইতিহাস থেকে বর্তমান ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রবীণ রাজনীতিক ও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কোনো শিক্ষা নিয়েছেন বলে মনে হয় না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম বলেছে, এক্ষুনি অর্থাৎ বর্তমান সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারত।
বিশ্বব্যাপী অর্থাৎ তথাকথিত মুক্তবিশ্বে আধিপত্যবাদ কিংবা কর্তৃত্ববাদের ক্রম উত্থানের কারণে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। সেই সুযোগে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য ধর্মীয় উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িক উসকানি, এমনকি জঙ্গিবাদকে মদদ দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ তারাই আবার গণতন্ত্র সম্মেলনে যাচ্ছে বিভিন্ন অভিযোগ মাথায় নিয়ে। রাজনৈতিক আধিপত্য বা কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা কিংবা বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়ম কিংবা বিরোধী দলের প্রতি ক্রমাগতভাবে দলন-পীড়ন ও ফ্যাসিবাদী আচরণের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র যাদের গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুনিশ্চিত কিংবা পুনরুদ্ধার করতে সেসব দেশের ভবিষ্যৎ বা ভূমিকা কী হবে? নাকি তাদের এক বেপরোয়া ও কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসনের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে? পদ্ধতিগতভাবে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, জনগণের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে কী সেসব দেশের মানুষ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র তাদের জন্য কী বার্তা পাঠাচ্ছে? বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরাশক্তি হওয়ার কারণে নিজে অভিযুক্ত হয়েও যুক্তরাষ্ট্র স্বার্থপরের মতো একটি গণতন্ত্র সম্মেলন ডেকেছে, যেখানে অনেক গণতান্ত্রিক দেশকে কাছে টেনে নেওয়ার পরিবর্তে দূরে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। সে কারণেই চীনের নেতা শি চিনপিং বলেছেন, তিনিও একটি গণতন্ত্র সম্মেলন ডাকবেন কায়েমি স্বার্থবাজদের মুখোশ উন্মোচনের লক্ষ্যে। গণতন্ত্রের নামে যারা অপশাসন, শোষণ ও মানুষের স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাবে ও নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য কর্তৃত্ববাদী রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে, তাদের জন্য সুইডেনভিত্তিক সেই গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের এটি ছিল একটি জেগে ওঠার ডাক’ (Wakeup Call) বা হুঁশিয়ারি। এতে শাসকগোষ্ঠীর চৈতন্য জাগ্রত হলে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র আবার মুক্তি পেতেও পারে। আবার গণতন্ত্রের সুবাতাস বইতে পারে অবাধ স্বাধীনতায়।
সুইডেনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উল্লেখ থাকায় সংগত কারণেই বিশ্বব্যাপী তা বাংলাদেশি নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশিরা চায়, ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের পর যে দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে, তার নাগরিকরা গণতান্ত্রিক আদর্শে বলীয়ান হোক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে শত বাধার মুখেও যে দেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে, তার নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং জনগণের প্রদত্ত নির্বাচনের রায় যেন প্রহসনে পরিণত না হয়। নিজের বিবেক ও রাজনৈতিক চেতনা এবং বিশ্ববাসীর কাছে কোনো কারণে তাদের যেন মাথা হেঁট না হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকার ও বিরোধী দলের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। গণতান্ত্রিক বিধি-বিধান অনুযায়ী যার যার দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া উচিত। নতুবা শত উন্নয়নের মুখেও বিশ্বব্যাপী আমাদের মর্যাদা বাড়বে না।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
gaziulhkhan@gmail.com