অসুস্থ হয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হওয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা স্বাভাবিক এবং তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আপাতত হাসপাতালেই বিশ্রাম নেবেন এবং এতেই সেরে উঠবেন বলে আশা করছেন তারা।
মঙ্গলবার বিকালে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এই কথা জানান। ওবায়দুল কাদেরের জন্য গঠিত মেডিকেল টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি।
শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, টানা রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে উনি অনেক পরিশ্রম করেছেন। উনার একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। উনি শঙ্কামুক্ত, সবাই উনার জন্য দোয়া করবেন।
বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে নিয়মিত বিএসএমএমইউতে মেডিকেল চেকআপ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। আজকেও উনি চেকআপে এসেছিলেন। এ সময় আমাদের ১০ জনের বিশেষজ্ঞ একটি চিকিৎসক দল উনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তারা বলেছেন, উনি এত বেশি পরিশ্রম করেছেন, তাই উনার একটু বিশ্রাম নেওয়া দরকার। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ৩১২ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে।
শারফুদ্দিন বলেন, আমরা একটু আগে দেখে এসেছি উনার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৯। হৃৎস্পন্দন ৭৩। তার মানে সবকিছু স্বাভাবিক। বয়সের কারণে তার ডায়াবেটিসসহ উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে বলে জানান এই চিকিৎসক। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন ওষুধে তিনি ঠিক হয়ে যাবেন।
চিকিৎসার জন্য ওবায়দুল কাদের দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য একটুও লালায়িত নন জানিয়ে বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, এ বিষয়টি আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। বিশেষজ্ঞ হিসাবে আমরা যে সবাইকে চিকিৎসা দিতে সক্ষম তার প্রমাণও উনি রাখলেন। যেমন করে করোনায় গত দেড় বছরে প্রমাণ করে দিয়েছে কোনো রোগীকে বাহিরে গিয়ে চিকিৎসা করতে হয়নি।
ভিসি বলেন, আগামীকাল সকাল ১০টায় মেডিকেল বোর্ড তাকে পুনরায় দেখবেন। সেসময় পরবর্তী আপডেট জানানো হবে।
ওবায়দুল কাদেরের করোনাজনিত সমস্যা নেই জানিয়ে ভিসি বলেন, আমরা উনার করোনাজনিত কোনো সমস্যা পাইনি। তবে করোনা যেহেতু আছে, তাই উনার কাছে কেউ যাতে না আসে, তাই আমরা সব সংরক্ষিত করে দিয়েছি।
শ্বাসকষ্ট আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বয়সে হাঁটলে অনেকের এমন হয়। তবে সেটা বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
লান্সে সংক্রমণ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ জাতীয় কিছু থাকলেও থাকতে পারে। সেটার জন্য আমরা সংক্রমণের ওষুধ দেব। এটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমরা নরমাল মনিটরিং করে দেখেছি। এখন উনি শঙ্কামুক্ত ভালো আছেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা আমাদের ফলোআপে থাকেন, তাদের সবসময় যোগাযোগ রাখতে বলি। উনার লান্সে পানি আছে কি না, সেটা আগামীকাল বোর্ডের পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারবো। এখনো আমরা এই বিষয়টি জানতে পারেনি। এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান করে জানতে পারবো।
ভিসি অধ্যাপক শরফুদ্দিন আহমেদ নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ডে আরও রয়েছেন, প্রো ভিসি একেএম মোশাররফ হোসেন ও অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক আবু নাছের রিজভী, অধ্যাপক ফজলুর রহমান, অধ্যাপক আতিকুর রহমান, অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক আরাফাত।
২০১৯ সালের ৩ মার্চ গুরুতর অসুস্থ হয়ে বিএসএমএমইউয়ে ভর্তি হন ওবায়দুল কাদের। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর এনজিওগ্রাম করে তার করোনারি ধমনিতে তিনটি ব্লক পান চিকিৎসকেরা, যার মধ্যে একটি অপসারণ করা হয়। এরপর তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুই মাসেরও বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর দেশে ফেরেন তিনি।
সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পর ২০২০ সালে আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন কাদের। গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হওয়ার পর তাকে আবারও ভর্তি করা হয় বিএসএমএমইউতে। সুস্থ হওয়ার পর তিনি বাসায় ফেরেন।