নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রস্তুতি শুরু করেছে বঙ্গভবন। আগামী সপ্তাহে এই সংলাপ শুরু হতে পারে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছে বঙ্গভবনের একাধিক সূত্র।
সূত্রটি ২০ ডিসেম্বর এই সংলাপ শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সংলাপের সূত্রপাত হবে।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, সংলাপের বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক কোনও আমন্ত্রণ পাইনি। তবে শুনেছি ২০ ডিসেম্বর সংলাপ শুরু হবে এবং ওইদিন আমাদের ডাকা হবে। আনুষ্ঠানিক চিঠি পেলে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবো।
বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গেই রাষ্ট্রপতি আলোচনা করবেন। আলোচনা শেষে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। এতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি)সহ ২-৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক থাকবেন।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন।
সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হাতে। গেল এক দশকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে সর্বশেষ দুই নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন।
সাংবিধানিক সংস্থা ইসি সদস্যদের নিয়োগে আইন করার কথা থাকলেও স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও তা হয়নি। এ নিয়োগ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিরোধী দলগুলোর সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে সরকারকে। অবশ্য এবার সরকারও ইসি গঠনে আইন প্রণয়নে তার ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছে। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, তারা সময়ের স্বল্পতার কারণে এবার আইন করতে পারছে না। সার্চ কমিটির মাধ্যমেই এবারও ইসি গঠন করা হবে। চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের আগামী দুটি অধিবেশনের মধ্যে তিনি ইসি গঠন সংক্রান্ত আইন সংসদে তুলনে পারবেন। এর খসড়া তৈরি করা হচ্ছে বলেও আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং এ বিষয়ে প্রণীত কোনও আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি গঠনের আগে ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সেবার সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। একমাস ধরে ৩১টি দলের সঙ্গে চলা ওই সংলাপ ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি শেষ হয়। সার্চ কমিটি গঠন করার পর সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই কমিটির কাজের সাচিবিক দায়িত্বও থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হাতে।