ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি নেটওয়ার্ক ফর এডুকেশন (আইপিএনইডি) এর এশিয়া মহাদেশের আঞ্চলিক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত।
উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি নেটওয়ার্ক ফর এডুকেশন এর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হবার জন্য গত ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোট নেওয়া হয়। আজ নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তিনি আইপিএনইডি এর শিক্ষা বিষয়ক প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
আরমা দত্তের আরেকটি বড় পরিচয় হচ্ছে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য, ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর হাতে শহীদ ও বাংলা ভাষার অন্যতম রূপকার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতিসন্তান ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি। বাবা সঞ্জীব দত্ত ছিলেন পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক। মা প্রতীতি দেবী বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্তিক ঘটকের যমজ বোন। ছোট চাচা দীলিপ দত্তই মূলত বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন। ১৯৭১ সালে দাদা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আর একমাত্র চাচা দীলিপ দত্ত দু’জনেই পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন।
শিক্ষাজীবন
কুমিল্লা শহরের একটি আমেরিকান কনভেন্ট স্কুলে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি। মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে তিনি ওই স্কুলে ভর্তি হন। দাদা যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন ঢাকার ভিকারুননেসা স্কুলে লেখাপড়া করেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত চেয়েছিলেন বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনা করে আরমা প্রকৃত বাঙালি হবেন। কিন্তু পরে ইংরেজী পড়ায় তার আগ্রহ দেখে আবার পাঠান কুমিল্লার কনভেন্টে। ম্যাট্রিক পাস করেছেন ১৯৬৬ সালে নবাব ফয়জুন্নেসা স্কুল থেকে।
উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন কুমিল্লা মহিলা কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে। সে বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। ১৯৭৪ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি।
কর্মজীবন
আরমার কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে। দেড় বছরের মতো চাকরি করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন তাকে ব্যথিত করে। তিনি চলে যান কানাডায় স্বামীর কাছে। কিন্তু কানাডার আইনে পোষ্য হিসেবে কোনো কাজ পাওয়া তার জন্য জটিল হয়ে পড়েছিল। ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি আবার বাংলাদেশে চলে আসেন। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ তার কাছে তখনো অস্থিতিশীল ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আর যোগ দেননি।
এ অবস্থায় তিনি ইউএসএআইডিতে প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হিসেবে যোগ দেন। দুই বছরের মতো সেখানে ছিলেন। তারপর ১৯৮৩ সালে যোগ দিলেন নরওয়েজিয়ান এইড নোরাডে। সেখানে তার পেশাগত উন্নয়ন ঘটে। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি নোরাডে ছিলেন। এরপর ১৯৮৯ সালেই প্রিপ ট্রাস্টে যোগ দেন আরমা দত্ত। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন ডেভিড পি করটেন। পরবর্তীকালে আরমা দত্তই প্রিপ ট্রাস্টের হাল ধরেন। বর্তমানে তিনি প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক।
অবদান ও স্বীকৃতি
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর স্বাধীনতা সংগ্রাম যখন প্রবল আকার ধারণ করল তখন আরমা দত্ত দিনরাত সাংগঠনিক কাজ করতেন। ২০০১ সালে রাজনৈতিক কারণে যখন এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় তার বিপক্ষে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে তার প্রতিষ্ঠান প্রিপ ট্রাস্ট। এনজিওদের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি বাড়ানোর জন্যও কাজ করেছেন তিনি। নারী জাগরণে অবদানের কারণে ২০১৬ সালে তিনি বেগম রোকেয়া পদক লাভ করেন।