পড়াশোনা বন্ধ না করায় মেঘলার মাথার চুল কেটে দেন শ্বশুর-শাশুড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইলমা চৌধুরী মেঘলা

গত ২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলার বিয়ে হয়। স্বামী ইফতেখার আবেদীন কানাডাপ্রবাসী। রাজধানীর বনানীর অভিজাত এলাকার বাসিন্দা। সবই ঠিক ছিল। সুখের সংসারের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন মেঘলা। তবে বিয়ের পরপরই শুরু হয় পারিবারিক ঝামেলা।

মেঘলাকে কোনোভাবেই ঢাবিতে পড়াশোনা করতে দেবেন না তার শ্বশুর-শাশুড়ি। তাদের সঙ্গে একমত মেঘলার স্বামীও। তবে নৃত্যকলা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী মেঘলা চেয়েছিলেন পড়ালেখা শেষ করতে। ভালো ফল নিয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন এই তরুণী, যা নিয়েই শুরু কলহ।

স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ির পড়াশোনা বন্ধের নির্দেশ না মানায় মেঘলার ওপর নেমে আসে অমানসিক শারীরিক নির্যাতন। স্বামী ইফতেখার, শাশুড়ি শিরিন আমিন ও শ্বশুর মো. আমিন মিলে মেঘলার মাথার চুল কেটে দেন। বিয়ের তিন মাস পর কানাডায় চলে যান মেঘলার স্বামী। তবুও থামেনি নির্যাতন। শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে মেঘলার ওপর।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মেঘলার স্বামী ইফতেখারের রিমান্ড শুনানিতে এসব কথা উল্লেখ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লা। তিনি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আসামির সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইফতেখারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, বিয়ের তিন মাস পর মেঘলাকে বনানীর বাসায় রেখে তার স্বামী ও এই মামলার প্রধান আসামি ইফতেখার আবেদীন কানাডায় চলে যান। গত ১১ ডিসেম্বর তিনি কানাডা থেকে দেশে ফেরেন। মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মেঘলার মাকে ফোন করেন ইফতেখার। বলেন, ‘আপনার মেয়ে গুরুতর অসুস্থ। তাকে চিকিৎসার জন্য গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, আপনারা দ্রুত আসেন।’ তবে হাসপাতালে গিয়ে মেঘলার মরদেহ পান তার বাবা-মা।

রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা এক পর্যালোচনায় উল্লেখ করেন, সুরতহাল পর্যবেক্ষণে মেঘলার নাক, উপরের ঠোঁটে কালচে দাগ, বাম কানে কাটা চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া ঘাড়ে লম্বা-লম্বি কাটা দাগ, গলার উপরিভাগের থুতনিতে কালচে জখম, পিঠের ডানপাশে জখম ও রক্ত জমাট বেধে ফুলে ওঠা, ডান ও বাম হাতের বিভিন্ন জায়গায় জখমের দাগ, আঙুলে কাটা-ছেঁড়া, দুই পায়ের হাঁটুর নিচে কালচে জখম ও ছোপ ছোপ দাগ এবং বাম পায়ের বুড়ো আঙুলে জখম দেখা গেছে।

তদন্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে ইলমা চৌধুরী মেঘলাকে মারধর করে হত্যা করেছে। আসামি ইফতেখারকে গ্রেফতারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে আসামির জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করছি।

জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বনানীতে স্বামীর বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ঢাবি শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলা। পরে তাকে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ইলমাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মেঘলার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে এটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে মেঘলার পরিবারের দাবি- তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মেঘলার মা সিমথি চৌধুরী বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

এদিকে, মেঘলার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই তার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় মেঘলার স্বামী ইফতেখার আবেদীন, তার মা শিরিন আমিন ও পালক বাবা মো. আমিনকে আসামি করা হয়।

শেয়ার করুন