বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ডন একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। ‘ইস্ট পাকিস্তান লেসন্স’ (পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা) শিরোনামের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, অতীতের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য পঞ্চাশ বছর আগে যে ভুল করেছে তা থেকে খুব কম শিক্ষা নিয়েছে পাকিস্তান। ১৬ ডিসেম্বর এই সম্পাদকীয় প্রকাশ হয়েছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পরাজয়ের পরও দেশটির দৈনিক পত্রিকা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের উক্তি জয়ের আগ পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে উল্লেখ করে খবর প্রকাশ করেছে। সেন্সরশিপের কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষেরা পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্ধকারে ছিল।
অর্ধ শতাব্দী পার হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা রয়েছে। যেমন- কেন দশকের পর দশক পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়েছে, যার ফলে রাষ্ট্র থেকে তারা বিচ্ছিন্নতাবোধ করেছে? আইয়ুব খানের পূর্ব ও পশ্চিমের ‘সমতা’ আনতে এক ইউনিট পরিকল্পনা ছিল মূলত পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে দমনের প্রচেষ্টা।
এতে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকাকে নিন্দনীয় উল্লেখ করলেও বলা হয়েছে, বাস্তবে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের দুর্বলতার কারণেই তারা এটি করতে পেরেছে।
ডনের সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠদের সরকার গঠনের অধিকার অস্বীকার করা ছিল বড় ভুলগুলোর মধ্যে ছিল একটি। এর বদলে পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মার্চে সামরিক অভিযান চালানো হয়।
দুর্ভাগ্যবশত, ওই ট্র্যাজেডি থেকে খুব কম শিক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। তথ্যের অধিকার, অল্প কিছু মানুষের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া, স্বৈরাচারি কৌশল ফিরিয়ে আনাসহ মানুষের অধিকারকে অস্বীকার করা এখনও পাকিস্তানের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করা মানুষদের পছন্দ।
সম্পাদকীয়তে শেষ দিকে বলা হয়েছে, পঞ্চাশ বছর পরেও পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ভুলের পুনরাবৃত্তি যেনও না ঘটে তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত ও সততাপূর্ণ বিতর্ক এখনও বাকি। জনগণের একটি অংশ যদি তাদের অধিকার জন্য আন্দোলন করে তাহলে তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করছে না। তারা শুধু সংবিধান অনুসারে মৌলিক সুরক্ষার দাবি করছে। তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না, যেমনটি করা হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা পাকিস্তানের স্বার্থের পক্ষে।