আমি তো ১৯৭১ সালেই মারা গিয়েছি: মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, আমি যখন বক্তৃতা দেই তখন সেই বক্তৃতা অনেকেরই পছন্দ হয় না ; এমনকি কেউ কেউ বলে- এসব বক্তৃতার জন্য আমাকে যদি সুবিধাজনক অবস্থায় পায়, তাহলে অনেকেই নাকি আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে! আমি বলি, এই ভীতিটা যারা বলেন তাদের থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই; কারণ আমি তো ১৯৭১ সালেই মারা গিয়েছি।আমার মা যেদিন আমার হাতে কিছু টাকা গুজিয়ে দিয়ে বলল, ঠিক আছে তুমি যাও, সেদিন আমি জানতাম না আবার মায়ের কোলে ফিরে আসব। সুতরাং আমাকে এসবের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়ামে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১০০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেওয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

মোকতাদির চৌধুরী, আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা আছি তাদের অনেকেই এখন জয় বাংলা বলি ঠেকায় পড়ে, আমাদের আইডেন্টিটির কারণে জয় বাংলা বলি। অন্যথায় জয় বাংলা বলতে চাই না, কারণ আমি যে জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু বলি সেটি তো আমার পীর সাহেব বলেন না! আবার অনেকে আছেন যারা সামনে জয় স্লোগান দেয়, আবার তাদের হুজুরের কাছে গিয়ে বলে আমি কিন্তু আপনাদের সাথেই আছি, বেকায়দায় পড়ে জয় বাংলা বলি। আমি এধরণের ভেক ধরে চলতে পারি না।

তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলি, যেদিন প্রথম জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করেছিলাম, এই জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে যারা একাত্তরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে সেই নেতৃবৃন্দের একাংশও সেদিন জয় বাংলা স্লোগান শুনে রাগান্বিত হয়েছিলেন; তারপরও আমরা জয় বাংলা বলেছি এবং জয় বাংলাকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করেছি। এখন হাইকোর্ট থেকে রায় হয়েছে জয় বাংলা আমাদের জাতীয় স্লোগান। আমি অপেক্ষা করছি সেইদিনটির যেদিন আপিল বিভাগ চূড়ান্তভাবে বলে দিবে আপনার বক্তৃতার শেষে আপনাকে জয় বাংলা বলতে হবে।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, যারা জয় বাংলা বলে না,আমি তাদের সাথে কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজ করব না। আমি যতদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংসদ সদস্য পদে আছি, অথবা না-ই থাকি ততদিন পর্যন্ত জয় বাংলা প্রশ্নে আপোস করব না। কারণ জয় বাংলা ছিল মুক্তিযুদ্ধে আমার অন্যতম স্লোগান, আমার অনুপ্রেরণা।

তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করছি, কারণ এই ম্যুরালের একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে, সেটি হলো- বাঙালির যে হাজার বছরের ইতিহাস আছে, বঙালির যে হাজার বছরের ঐতিহ্য আছে, বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রাম, আকাঙ্ক্ষা বাঙালি যে ভেবেছে আমার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দরকার, আমি স্বাধীনভাবে থাকতে চাই সেসব আন্দোলন সংগ্রাম ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিভূ হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করছি এজন্যই যাতে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা বুঝে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা। এতোদিন বুঝে নাই বলেই মিরপুরে পাকিস্তান আর বাংলাদেশ এক হয়ে যায়!

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, পাকিস্তান একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এর প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নাই কিন্তু এই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই আমি যুদ্ধ করেছি- এটিই হলো বাস্তবতা। এই পাকিস্তানের সাথে লড়াই করে ৩০ লক্ষ বাঙালি শহীদ হয়েছেন- এটিই হলো বাস্তবতা। আমার আড়াই থেকে তিন লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম হারা হয়েছেন এটি হলো বাস্তবতা। কিন্তু আমি বাঁধা দিতে পারিনি। আজকে যারা তরুণ তারা দেখেনি সেই জঘন্য নৃশংসতা।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। তিনি চেয়ে ছিলেন মানুষের দেশ হবে বাংলাদেশ। তিনি ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে গিয়ে বিশ্বের বড় বড় যুদ্ধবাজ দেশগুলোকে বলেছিলেন, আসুন আমরা সমস্ত যুদ্ধাস্ত্র ধ্বংস করে দেই। যুদ্ধের পেছনে যে পয়সা খরচ করি এগুলোকে আমরা বিজ্ঞানের উন্নয়নে, তথা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করি, তাহলেই পৃথিবীতে শান্তির সুবাতাস বইবে। আর জন্যই বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পুরস্কার প্রদান করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) হায়াত-উদ-দৌলা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুর রহমান, পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি।

এদিকে বিজয় দিবসের দিনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ পাঠ করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী। বিকেলে শহরের নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ এতে অংশগ্রহন করেন।

এ সময় সকলেই দেশকে ভালবাসার এবং দেশের সার্বিক কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলার অঙ্গীকার করে এ শপথ বাক্য পাঠ করেন।

শপথ বাক্য পাঠ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য র,আ,ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এতে জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।

শেয়ার করুন