দেশ গড়তে সবাইকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আজ বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিজয়ের ৫০ বছরের মূল আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ দেশবাসীর প্রতি এ আহ্বান জানান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান। এর মধ্য দিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক নতুন রাষ্ট্রের। এ দিন বাঙালির বিজয়ের দিন। এবছর সেই বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে নেওয়া হয়েছে দুই দিনের অনুষ্ঠানমালা। এতে অংশ নিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।
অনুষ্ঠানে স্বাধীন দেশের নাগরিকদের তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্বাধীনতা মানুষের অধিকার। অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে উঠে। আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে বাংলাদেশের কতটা অর্জন তার হিসাব মিলিয়ে দেখতে বলেন আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছি। এটা একটি জাতির জন্য খুব কম সময় নয়। সময় এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তা কতটুকু অর্জিত হয়েছে তার হিসাব মেলানোর।
স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে, স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সবাইকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। বলেন, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সকল ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।
বঙ্গবন্ধুকে মহানায়ক আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমনই একজন মহানায়ক, যার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি শোষণ-নির্যাতনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছিল। পেয়েছিল একটি স্বাধীন দেশ ও একটি প্রজাতন্ত্র। স্বাধীন দেশ, প্রজাতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান প্রণয়ন, রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির রুপরেখার পরিকল্পনা, এ সকল কাজ একই সঙ্গে বিশ্বে আর কোনো মহানায়কই করতে পারেননি।
উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে সবাই এগিয়ে আসবে বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, আর তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হচ্ছে। বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সুবর্ণ আলো দেখতে পাই।
বাংলাদেশ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু অনুসৃত ‘কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ও বহু পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কূটনৈতিক অঙ্গনে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বমানবতার ইতিহাসে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমি আশা করি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও ভারতসহ বিশ্ব সম্প্রদায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
জাতির পিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে আরও এগিয়ে যাবে আশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাব-মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে এটাই হোক সকলের চাওয়া-পাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।