বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবারও কমলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্বালানি তেল
জ্বালানি তেল। ফাইল ছবি

এক সপ্তাহ দাম বাড়ার পর গেলো সপ্তাহে বিশ্ববাজারে আবারও জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। এর আগে টানা ছয় সপ্তাহ কমার পর গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ে।

গেলো এক সপ্তাহে অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল ও হিটিং অয়েলের দাম কমেছে। এর মধ্যে অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে দুই শতাংশের ওপরে। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম কমেছে আড়াই শতাংশের ওপরে। আর হিটিং অয়েলের দাম কমেছে প্রায় দেড় শতাংশ।

বিশ্ববাজারে তেলের এই দাম কমার আগে এক সপ্তাহে দামে বড় উত্থান হয়। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ে প্রায় ৯ শতাংশ। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বাড়ে প্রায় ৮ শতাংশ। আর হিটিং অয়েলের প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ দাম বাড়ে।

অবশ্য তার আগে টানা ছয় সপ্তাহ দরপতনের মধ্যে থাকে জ্বালানি তেল। আর ছয় সপ্তাহের পতনের আগে বিশ্ববাজারে তেলের দামে বড় উত্থান হয়। এতে সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে উঠে আসে তেল।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার প্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় সরকার। ওই দিন রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ তেলের দাম সমন্বয় করছে। গত ১ নভেম্বর ভারতে ডিজেলের বাজারদর লিটারপ্রতি ১২৪ দশমিক ৪১ টাকা বা ১০১ দশমিক ৫৬ রুপি ছিল। আর বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা অর্থাৎ ৫৯ দশমিক ৪১ টাকা কম।

আরও বলা হয়, বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩ দশমিক ০১ টাকা কমে বিক্রি করছে। অন্যদিকে ফার্নেস অয়েল বিক্রি করছে লিটারপ্রতি ৬ দশমিক ২১ টাকা কমে। এতে করে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান করছে বিপিসি। অক্টোবর মাসে বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান দামে সরবরাহ করায় বিপিসির মোট ৭২৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে গাড়ির ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের এই দাম বাড়ার সমালোচনা করা হচ্ছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে গাড়ি ভাড়া বাড়ানোরও সমালোচনা হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে ৬ নভেম্বর এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে দেশেও দাম কমানো হবে।

তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়নি। আমরা জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বয় করেছি। ভারতসহ সারাবিশ্বে দাম বাড়া ও পাচার ঠেকাতেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অবশ্য বাংলাদেশে দাম বাড়ার পরপরই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমার প্রবণতা দেখা দেয় এবং টানা ছয় সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকে। এতে ৮৪ ডলার থেকে কমে অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৬৬ ডলারে নেমে আসে। তবে এরপরও দেশের বাজারে তেলের দাম কমানো হয়নি।

এদিকে গেলো সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রতি ব্যালের অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৯ ডলার বা ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এতে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ২০ ডলার। এর মাধ্যমে সপ্তাহের ব্যবধানে ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং মাসের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমেছে অপরিশোধিত তেলের দাম।

অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দামও গেলো সপ্তাহে কমেছে। গত সপ্তাহে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৯২ ডলার। এর মাধ্যমে মাসের ব্যবধানে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম কমেছে ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ কম।

অন্যদিকে গত এক সপ্তাহে ১ দশমিক ৪১ শতাংশ কমে প্রতি গ্যালন হিটিং অয়েলের দাম ২ দশমিক ২১ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে মাসের ব্যবধানে হিটিং অয়েলের দাম কমেছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

শেয়ার করুন