পাকিস্তানের সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রেখে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে অস্বাভাবিক সরকার গড়তে চায় বলে অভিযোগ করেছেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। তারা বলেছেন, যেসব রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ জামায়াত জঙ্গি-আল-বদর-রাজাকারের পাকিস্তানপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে রাজনৈতিক পার্টনারশিপ করে, তাদের বর্জন করতে হবে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় দিতে হবে।
আজ রোববার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বিএনপি আজকে ইস্যু নিয়েছে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার ইস্যু। অথচ এই দুই বছরে তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে একটা পোস্টারও করেনি। এটা তাদের ইস্যু নয়। এটা তাদের মুরব্বি দেশের ইশারায় দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ করতে তাদের এই হাঁকডাক।’
আমু বলেন, ‘বিএনপি এতই আমোদ-প্রমোদ করছে যে, আজ পর্যন্ত তাদের নিজেদের টাকায় বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করার উপলব্ধি তাদের নেই। তাকে বিদেশে নেয়ার একটা বেআইনি প্রস্তাব নিয়ে তারা কথা বলছে। বিএনপি আসলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চায় না।’
‘কোনো ইস্যু জনগণ খাবে না তাই বিএনপি-জামায়াত খালেদা জিয়ার বিদেশ ইস্যু নিয়ে মাঠ গরম করতে চায়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব দরবারের অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজকে শেখ হাসিনার কথার ব্যাপারে অন্য দেশের রাজনৈতিক নেতারা চিন্তা করে কথা বলেন। আজকে যদি কেউ মনে করেন ঠুনকো প্রধানমন্ত্রী, ঠুনকো সরকার ঠিক হবে না। এটা তারা প্রমান পেয়েছে, আরও প্রমাণ পাবে।’
জাতীয় সমাজাতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের চেহারা পরিবর্তন করেনি। এখনো পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। তারা জঙ্গিবাদ করে, অস্বাভাবিক সরকার করার পাঁয়তারা করছে। তারা রাষ্ট্রের ভিত্তির ওপর হামলার কথা বলে, চার মূলনীতি উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কথা বলে। এই ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা বলে এই জঙ্গি জামায়াতি চক্র মাফও চায়নি, বদলায়ওনি। উপরন্তু রাষ্ট্রের ওপর হামলার ছক আকছে। রাজাকার সাম্প্রদায়িক সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।’
ইনু বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষফোঁড়া ধর্ম ব্যবসায়ীরাই রাজনৈতিক বেইমান। তাদের বাংলাদেশের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তারা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কানেকশন রেখে সব ধরনের উস্কানি ও ষড়যন্ত্র করছে। যারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ওপর হামলা আক্রমন পরিচালনা করছে, ইসলাম বিক্রি করে ধর্মীয় উস্কানি দিচ্ছে। তাদের কঠোরভাবে দমনই না নিষিদ্ধ করতে হবে এবং রাজনীতি থেকে চিরবিদায় দিতে হবে।’
নির্বাচন বর্জন এবং অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব দিয়ে বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে দাবি করে ইনু বলেন, ‘আরেকটি অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার বীজ প্রকাশ্যে বিএনপি কয়েক দিন আগে রোপন করেছে। একটি অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গড়ার প্রস্তাব দিয়ে এবং নির্বাচন বর্জন করার প্রস্তাব দিয়ে এবং শেখ হাসিনার নির্বাচিত সরকারকে পদত্যাগ করার প্রস্তাব দিয়ে। সুতরাং বিএনপির এই প্রস্তাব কার্যত সাংবিধানিক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং দেশের রাজনীতিতে অস্থিতিশীল করার প্রস্তাব।’
আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘শুধু ভৌগলিক স্বাধীনতার জন্য নয়, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। যখন বিজয়ের পঞ্চাশ বছরের আমরা সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি তখন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এগুলো প্রতিরোধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শানিত করতে হবে। কথার ফুলঝুরি নয়, রাষ্ট্র এবং সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ে তুলতে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারন করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে মত দেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী বলেন, আজকে এই যে আমরা কথা বলছি, নেতা হয়েছি বঙ্গবন্ধু না থাকলে কিছুই হতো না। ১৫ আগস্টে যারা জন্মদিন পালন করে এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারে না। এরা স্বাধীনতাবিরোধী। বিএনপি যতই বলুক স্বাধীনতার স্বপক্ষের আসলে বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী। যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে যারা রাজনীতি করে ফায়দা লুটতে চায় তার বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে। ওয়াজ মাহফিলের নামে যারা স্বাধীণতা ও সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে, এদের ওয়াজগুলো বন্ধ করা দিতে হবে।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কনিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক শ্রমিক নেতা ডা. ওয়াজেদ খান, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা কামরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এসকে শিকদার, গণতন্ত্র পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ। সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস।