বিজয়ের মাসে বিজয় র্যালি দিয়ে বিএনপির বিজয়যাত্রা শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গণতন্ত্র রক্ষায় এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আমরা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দিয়ে সংগ্রাম করবো। শেষ পর্যন্ত বিজয় অর্জন করবো। আমাদের বিজয়যাত্রা শুরু হলো।
আজ রোববার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিজয় র্যালি শেষে সমাপনী বক্তব্যে একথা বলেন মির্জা ফখরুল। এসময় র্যালিতে সরব উপস্থিতির জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
বেলা ২টায় নির্ধারিত সময় ছিল র্যালি বের করার। কিন্তু এরআগেই নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে নয়াপল্টন ছাড়িয়ে একদিকে ফকিরাপুল অন্যদিকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্যে হয়।
দুইটার কিছু পরে আনুষ্ঠানিকভাবে র্যালি শুরু হয়। মির্জা ফখরুলসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
অনেকদিন পরে নির্বিঘ্নে কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়ে নেতাকর্মীরাও ছিলেন বেশ উৎফুল্ল। জাতীয় পতাকা কেউ মাথায় লাগিয়ে, কেউ হাতে নিয়ে অংশ নেন র্যালিতে। নারী সদস্যদের অনেকে লাল-সবুজের মিশ্রনে পোষাক পড়ে এতে অংশ নেন।
শোভাযাত্রার উদ্বোধনী বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বিজয় শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠবেন।’
শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে ট্রাকে করে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। দুপুর ১২টায় কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল থেকে ফকিরেরপুল সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর অবস্থানের ফলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে চায়। এদেশের মানুষ তারেক রহমানকে দেশে দেখতে চায়। এই দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, স্বৈরতন্ত্র চায় না।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এদেশের মানুষ কথা বলতে চায়, তাদের স্বাধীনতা ভোগ করতে চায়। গণতন্ত্র রক্ষায় এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আমরা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দিয়ে সংগ্রাম করবো এবং শেষ পর্যন্ত বিজয় অর্জন করবো। আমাদের বিজয়যাত্রা শুরু হলো।
এরআগে র্যালি উদ্বোধনের সময় দেয়া বক্তব্যে মির্জা ফখরুল দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বক্তব্য দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ভারাক্রান্ত মনে বিজয় শোভাযাত্রা করছি, যখন একাত্তরের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা দেশের সাবেক নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।’
তিনি বলেন, ‘একাত্তরে আমরা গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম। এরা (আওয়ামী লীগ) আমাদের ভোটাধিকার ও বলার-লেখার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র অর্জন করেছিলাম, তার লক্ষ্য ছিল একটি নিরাপদ রাষ্ট্র পাব। আমরা কথা বলার অধিকার পাব, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার পাব। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার একটি বাকশালী রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে এ দেশের জনগণকে জিম্মি করে ক্ষমতায় চেপে বসে আছে।’
বিজয় র্যালিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল মাহমুদ টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ও রফিকুল আলম মজনুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।
র্যালিতে অংশ নেয়া বিএনপি নেতাকর্মীরা সরকার বিরোধী ও দুর্নীতিবিরোধী নানা স্লোগান দেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করেন।
বিএনপি থেকে আগেই জানানো হয় তাদের এই বিজয় র্যালি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর মোড়ে শেষ হবে। সে অনুযায়ী শান্তিনগর থেকে ঘুরে নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হয় র্যালি।
এদিকে র্যালিকে কেন্দ্র করে সকাল নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। বিশেষ করে শান্তিনগর মোড়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা ছিল।
অন্যদিকে র্যালির কারণে পল্টনের আশপাশের সব সড়কেই যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় জনভোগান্তি হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে অনেককে গাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষায় অনেকে গাড়িতে ওঠার সুযোগ না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে ছুঁটেছেন।