না ফেরার দেশে চলে গেলেন একাত্তরের রণাঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখা শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারীনেত্রী ও সাহিত্যিক এবং উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি মুশতারী শফীর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
মুক্তিযুদ্ধের এই শহীদজায়া কিডনি ও রক্তে সংক্রমণসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। এরই মধ্যে গত ২ ডিসেম্বর তাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর তাকে ভর্তি করা হয় সিএমএইচে। তিনি দুই ছেলে ও চার মেয়েসহ অসংখ্য স্বজন-গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এদিকে মুশতারী শফীর মৃত্যুতে দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমেছে।
১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুশতারী শফীর জন্ম। তার বাবার বাড়ি ফরিদপুরে। একাত্তরের এপ্রিলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার স্বামী মোহাম্মদ শফী ও ছোট ভাই এহসানকে পাকসেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি চট্টগ্রামে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
এর আগে ষাটের দশকে নারী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা মুশতারী শফী নব্বইয়ের দশকে শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন জোরদার হলে সেখানেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠনে ভূমিকার পাশাপাশি এতে নেতৃত্বও দেন। জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে এই শহীদজায়া।
মুক্তিযুদ্ধের ওপর তার লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী’, ‘চিঠি, জাহানারা ইমামকে’ ও ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’। এছাড়া তিনি প্রবন্ধ, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি, কিশোর গল্পগ্রন্থ, স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থও লিখেছেন।
স্বাধীনতাযুদ্ধে অনন্য ভূমিকায় ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমি তাকে ‘ফেলোশিপ’ প্রদান করে। ২০২০ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘রোকেয়া পদক’ পান তিনি।