৭২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে কলকাতা দখল করল মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেস। সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ১৪৪টি আসনের মধ্যে ১৩৪টিতে জয় পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। আর ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি আগের পুরভোটের চেয়ে কম আসন পেয়েছে। তারা পেয়েছে ৩টি আসন। বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস পেয়েছে দু্ইটি করে। আর অন্যরা পেয়েছে ৩টি আসন।
গত রোববার কলকাতা সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। একদিন পর আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। বেলা গড়ানো সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক আসনে তৃণমূল প্রার্থীদের বিজয়ের খবর আসতে থাকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরনির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায় প্রত্যাশা মতোই গতবারের থেকে ব্যবধান জয়ী হয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। বিজেপির আসন সংখ্যা কংগ্রেস এবং বামেদের থেকে বেশি। কিন্তু ভোট শতাংশের নিরিখে বিজেপিকে পেছনে ফেলেছে বামেরা। এমনকি বিজেপির থেকে বেশি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বামেরা।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে ভূমিধস জয়ের পর এবার কলকাতা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও বিরাট ব্যবধানের এ জয়ে উচ্ছ্বসিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
পুরভোটে জয়ী সব বিধায়ক
২০২১ সালের পুরনির্বাচনে ছয় বিধায়ককে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল। টিকিট পেয়েছিলেন সাংসদ মালা রায়ও। ২১ ডিসেম্বর ফলপ্রকাশ হতেই দেখা গেল এই সাত জনই জিতেছেন। পুরভোটে জয়ী তৃণমূলের বিধায়করা হলেন কলকাতা বন্দরের বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম। রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমার। যাদবপুরের বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার। কাশীপুর-বেলগাছিয়ার বিধায়ক অতীন ঘোষ। বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পাল। বেহালা পূর্বের বিধায়র রত্না চট্টোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায় জিতেছেন ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই।
মমতার টুইট
কলকাতা পুরভোটে বিপুল জয়ের পর টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘কলকাতা পুরভোটে জয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন। পরিশ্রম এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মানুষের সেবা করার কথা মনে রাখবেন। পুর এলাকার প্রত্যেক বাসিন্দাকে হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানায় আমাদের উপর আরও এক বার বিশ্বাস রাখার জন্য।’
পুরভোটে তৃণমূলকে জেতানোর জন্য সাধারণ মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে কালীঘাটে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের সমর্থন করার জন্য মা-মাটি-মানুষকে ধন্যবাদ। মানুষ যত আমাদের সমর্থন করবেন, তত আমাদের মাথা নত হবে।’
বিজেপি নেতাদের ‘গোস্বা’
পুরভোটে ব্যাপক ব্যবধানে হারের পর মমতার তৃণমূলের ওপর গোস্বা ঝাড়লেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। পুরভোটের গণনার দিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি দাবি করল, তৃণমূল-সিপিএমের গোপন ‘বোঝাপড়াই’ পুরভোটে বিজেপি-র ভোট কমার অন্যতম কারণ। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, বামেদের রাজ্যের বিরোধী শক্তি হিসেবে তুলে আনতে চাইছে তৃণমূলই। বিরোধীদের মধ্যে ভোট ভাগ করে নিজেদের আরও শক্তিশালী করে তুলতে চাইছে তারা।
কলকাতা পুরভোটে বিজেপি-র প্রাপ্ত ভোট ৯ শতাংশের আশপাশে। প্রাপ্ত আসন ৩। ২০১৫ সালের পুরভোটের তুলনায় অনেকটাই কমেছে প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা। আগের পুরভোটে বিজেপি ৭ টি আসন পেয়েছিল। ভোট শতাংশ ছিল ১৫.৪২। অন্য দিকে, বামেরা ২টি আসন পেলেও এ বার প্রায় ১১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। প্রাপ্ত ভোটের শতাংশের নিরিখে উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। এ প্রসঙ্গে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘বামেরা বিধানসভা ভোটের সময় বলেছিলেন, ‘নো ভোট ফর বিজেপি’। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করেছিলেন। তার প্রতিদান হিসেবেই কয়েকটা আসন পাইয়ে দিয়েছে তৃণমূল। আমাদের কাছে খবর ছিল, যে সমস্ত বুথে ছাপ্পা হয়েছে, সেখানে তিনটে ভোট তৃণমূলে পড়লে দু’টো পড়েছে সিপিএমে।’’