জানুয়ারিতেই মালয়েশিয়ায় যাবে কর্মী: আশা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ

দীর্ঘদিন পর উন্মোচিত হতে যাওয়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে নতুন বছরের শুরুতেই (জানুয়ারি ২০২২) কর্মী নিয়োগ শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। ন্যূনতম খরচে এই শ্রমিক পাঠানো হবে জানিয়ে এ ব্যাপারে কারো সঙ্গে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন মন্ত্রী।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এই কথা বলেন।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, আগে কর্মী পাঠাতে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা ছিল, এবার আরও কম হবে। মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের দুই দেশের এজেন্সি যৌথভাবে কাজ করবে। আর বাংলাদেশ ভাগের এজেন্সি চার্জ থেকে শুরু করে সব ধরনের খরচ বহন করবেন শ্রমিক। আর মালয়েশিয়া অংশের সব চার্জ বহন করবেন নিয়োগকর্তা।

এবার কর্মী নিয়োগে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যে সিন্ডিকেটের কারণে তিন বছর আগে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেই সিন্ডিকেট এবার থাকছে না। এবার কর্মী পাঠাতে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট কিংবা গ্রুপিং করার সুযোগ থাকবে না। তবে এবার কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সি জড়িত থাকছে, যা আগে ছিল না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম এনডিসিসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে এর ফলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং প্রত্যাবাসনের আদর্শ কাঠামো প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান একটি অন্যতম সহযোগিতার ক্ষেত্র এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী বলে দুই দেশ বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের কর্মীরা যেমন মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে, তেমনি বাংলাদেশের উন্নয়নেও অবদান রেখে যাচ্ছে যা দুই দেশই স্বীকার করে। দুই দেশের আইন, বিধি, প্রবিধান, জাতীয় নীতি এবং নির্দেশাবলির আলোকে এই সমঝোতা স্মারকে কর্মীদের অধিকার ও মর্যাদাকে অধিকতর সুরক্ষিত করা হয়েছে।

সচিব বলেন, এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সকল খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন। যেমন- রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আনয়ন, আবাসন, কর্মে নিয়োজন এবং কর্মীর নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ বহন করবেন। নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় আসার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, করোনা পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত খরচসহ সকল ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা/ কোম্পানি বহন করবেন। নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বীমা, চিকিৎসা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করবে। ফলে আশা করা যায় কর্মীর অভিবাসন খরচ অনেক কমে যাবে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রত্যেক কর্মীকে মালয়েশিয়ার এমপ্লয়িজ সোশ্যাল সিকিউরিটি এক্ট ১৯৬৯’র আওতায় কর্মকালীন দুর্ঘটনা বা কাজের কারণে শারীরিক সমস্যা হলে চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ পাবে। ফলে কর্মী ফ্রি চিকিৎসা সুবিধা, অস্থায়ী অক্ষমতার সুবিধা, স্থায়ী অক্ষমতার সুবিধা, নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতি ভাতা, ডিপেন্ডেন্ট বেনিফিট, পুনর্বাসন সুবিধাসহ মালয়েশিয়ার আইনানুযায়ী প্রাপ্য সুবিধাদি পাবেন।

এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে পাঠানো বৈধ রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলোর তালিকা থেকে নিয়োগকারী মালয়েশীয় সরকারের বিধি অনুযায়ী বাংলাদেশি এজেন্ট বেছে নেবেন। এ বিষয়ে মালয়েশীয় সরকার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে বলে সমঝোতা স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

শেয়ার করুন