দুই দশক পর বাজেট ঘোষণার পথে তালেবান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

তালেবানের নতুন সরকার
ছবি: সংগৃহীত

দুই দশক পর আফগানিস্তানে নতুন বাজেট ঘোষণা করতে চলেছে তালেবান সরকার। তাদের দাবি, এটি হবে পুরোপুরি বিদেশি সাহায্যশূন্য। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগান সরকার যে পরিমাণ অর্থ নিয়ে বাজেট করছে, তা দিয়ে গোটা বছর চলা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। অর্থাৎ, এতে ‘অপূরণীয়’ ঘাটতি থেকে যাবে।

গত আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের পশ্চিমাসমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর আন্তর্জাতিক দাতারা দেশটিতে সব ধরনের অর্থসহায়তা বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি, বিদেশে আফগান সরকারের শত শত কোটি ডলারের সম্পদ স্থগিত করে পশ্চিমা দেশগুলো।

এ অবস্থায় ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে আফগানিস্তানে। জাতিসংঘ এটিকে ‘ক্ষুধার ভূমিধস’ বলে উল্লেখ করেছে। এমন মহাসংকটের মধ্যেই নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে চলেছে তালেবান সরকার।

আফগান অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমদ ওয়ালি হাকমল জানিয়েছেন, এরই মধ্যে খসড়া বাজেট প্রস্তুত হয়ে গেছে। তবে এর আকার কেমন হচ্ছে তা নিশ্চিত করেননি তিনি। হাকমল জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরেই এ তথ্য প্রকাশ করা হবে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমরা অভ্যন্তরীণ রাজস্ব থেকে এই অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা করছি এবং তা করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশনায় আফগানিস্তানের আগের প্রশাসন ২০২১ সালের বাজেট ঘোষণা করেছিল। এতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি আফগানি (তৎকালীন ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার) সাহায্য ও অনুদান এবং ২১ হাজার ৭০০ কোটি দেশীয় রাজস্ব থাকা সত্ত্বেও বড় ঘাটতি দেখা গিয়েছিল।

ওই সময় মার্কিন ডলারের বিপরীতে আফগান মুদ্রার মান ছিল ৮০র কাছাকাছি। তবে তালেবানের পুনরুত্থানের পর আফগানির মানে রীতিমতো ধস নামে। গত ১৩ ডিসেম্বর এর মান নেমে গিয়েছিল ১৩০-এ। অবশ্য শুক্রবার নাগাদ তা আবার ১০০র কাছাকাছি ফিরেছে।

হাকমল স্বীকার করেছেন, দেশটিতে সরকারি কর্মচারীদের এখনো কয়েক মাসের বেতন বাকি। তবে বছর শেষ হওয়ার আগেই সব দেনা মিটিয়ে দিতে তারা ‘যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন’। আর্থিক ঘাটতি পূরণে নতুন বেতন কাঠামো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

আফগানিস্তানে নতুন সরকারের রাজস্ব বিভাগ গত মাসে জানিয়েছে, আগের আড়াই মাসে তারা ২ হাজার ৬০০ কোটি আফগানি সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে কাস্টমস শুল্কই ১ হাজার ৩০০ কোটি। এছাড়া, দরিদ্র ও এতিমদের সহায়তায় নতুন একটি ইসলামী ট্যাক্সও চালু করা হয়েছে।

গত শুক্রবার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আফগান অর্থনীতিবিদ বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, তালেবান সরকার নতুন যে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে, তার আকার ২০২১ সালের বাজেটের এক-চতুর্থাংশ হতে পারে।

তার কথায়, তালেবানরা বলছে, সীমান্ত ক্রসিংয়ে তাদের অধিক স্বচ্ছতা রয়েছে। যার অর্থ, আগের তুলনায় কম পণ্য শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। কিন্তু, এটি যদি সত্যও হয়, তাদের সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হতে পারে মাত্র ১০ হাজার কোটি আফগানি। কারণ, তীব্র মন্দার কারণে কর সংগ্রহ অনেক কম হবে।

সূত্র: এএফপি, এনডিটিভি

শেয়ার করুন