দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণের ব্যাপক ঊর্ধ্বগতিতে খিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের আবহেও বিশ্বের বহু দেশে জারি রয়েছে বিধিনিষেধ। এই পরিস্থিতিতে উৎসব ও ভ্রমণের মৌসুমেও বিশ্বজুড়ে বাতিল করা হয়েছে হাজার হাজার ফ্লাইট। শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থাটি জানিয়েছে, দেশে দেশে ওমিক্রনে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে সৃষ্ট আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে ক্রিসমাস উইকেন্ডের নির্ধারিত সাড়ে চার হাজারেরও বেশি বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। মূলত ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে অতিদ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া এবং এর জেরে পর্যটকদের দুর্দশা ও অনিশ্চয়তার কথা চিন্তা করেই এসব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়ার.কম-এর তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ২ হাজার ৪০১টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় ১০ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। বড়দিনের ঠিক একদিন আগে এই দিনটিতে মূলত আকাশপথে চলাচলে ব্যাপক চাপ থাকে।
এই ওয়েবসাইটের তথ্যে আরও দেখা যাচ্ছে যে, শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) বড়দিনের উৎসবের দিনে সারা বিশ্বে ১ হাজার ৭৭৯টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া শনিবারের নির্ধারিত আরও ৪০২টি ফ্লাইটের ছাড়ার সময় পুনঃনির্ধারণ করে রোববার করা হয়েছে।
ফ্লাইটঅ্যাওয়ার.কম বলছে, ওমিক্রন আতঙ্কে ক্রিসমাস উইকেন্ডে এক যুক্তরাষ্ট্রেই যত সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে তা সারা বিশ্বে বাতিল হওয়া মোট ফ্লাইটের এক-চতুর্থাংশের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স এবং ডেল্টা এয়ারলাইন্স মিলেই শুক্রবার একদিনে বাতিল ঘোষণা করে প্রায় ২৮০টি ফ্লাইট। এয়ারলাইন্স দু’টির দাবি, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে কর্মী সংকট দেখা দেওয়ায় তারা ফ্লাইট বাতিল করছে।
এদিকে এবিসি নিউজ জানিয়েছে, শুক্রবার ১৬৯টি ফ্লাইট বাতিল করেছে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স। যা সংস্থাটির মোট ফ্লাইটের ১০ শতাংশ। শনিবারের ১৩০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এয়ারলাইন্সটি।
অন্যদিকে ডেল্টা এয়ারলাইন্স বাতিল করেছে ১২৪টি ফ্লাইট। এছাড়াও জেট ব্লু এয়ারওয়েজ শুক্রবার ৭০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে, যা সংস্থাটির দৈনিক অপারেশনের প্রায় ৭ শতাংশ।
ডেল্টা এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বড়দিনের ছুটি উপলক্ষে প্রতিবছরই বিপুল যাত্রীর চাপ থাকে। বিগত বছরগুলোতে আমরা ভালোভাবেই সেই চাপ সামলেছি। কিন্তু এবার যে পরিস্থিতি, তাতে আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছি না।’
এর আগে ইউনাইটেড এয়ারলাইনস এক বিবৃতিতে জানায়, চলতি সপ্তাহে দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধি আমাদের ফ্লাইট ক্রু এবং অপারেশন পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। যার কারণে দুর্ভাগ্যবশত কিছু ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। বিষয়টি আমরা গ্রাহকদের বিমানবন্দরে আসার আগেই জানিয়ে দিচ্ছি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান পরিষেবা সংস্থাগুলোর জোট এয়ারলাইন্স ফর আমেরিকার (এফোরএ) প্রধান নির্বাহী নিক ক্যালিও এবিসি নিউজকে জানান, ওমিক্রনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান পরিবহন বাণিজ্য বড় ধরনের লোকসানের ঝুঁকিতে আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া যদি ঠেকানো না যায়, সেক্ষেত্রে বর্তমান কর্মীদের নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে উঠবে।’