সহিংস পরিস্থিতির মধ্যেই আগামীকাল রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) চতুর্থ ধাপে দেশের ৮৩৮ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোট হচ্ছে। দেশের ৫৮টি জেলার ১১৮টি উপজেলার এসব ইউপিতে গতকাল শুক্রবার রাতে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে।
এ ধাপে ভোটের আগেই একক প্রার্থী হিসেবে ৪৮ চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে চেয়ারম্যান পদে ৭৯০ ইউপিতে ভোট হবে। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১১২ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১৩৫ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
৭৯০ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিন হাজার ৮১৪ জন। নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৯ হাজার ৫১৩ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩০ হাজার ১০৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
৮৩৮ ইউপিতে মোট ভোটার এক কোটি ৬২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৯ জন। মোট ৯ হাজার ২২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৪৯ হাজার ৮৩২টি ভোট কক্ষে এ ধাপে ভোট হবে।
আগের ধাপগুলোর মতোই চতুর্থ ধাপ ও আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় পঞ্চম ধাপের নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। গতকাল চতুর্থ ধাপে প্রচারের শেষ দিনেও বিভিন্ন এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি ভেঙে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। অনেকের আশঙ্কা, ভোটগ্রহণের দিন সহিংসতা, অনিয়ম আরো ব্যাপক হতে পারে।
সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশন এবার বিশেষ সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ধাপের নির্বাচনকে আইনানুগ এবং সহিংসতামুক্ত করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিছু কিছু এলাকায় সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচনে চলমান সহিংসতা রোধে মাঠ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সম্প্রতি এক পত্রে (ডিও) মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের কাছে এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে হতাহতের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। বিষয়টি ইসির নজরে এসেছে এবং বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে বলে ইসি আশা করে। তা ছাড়া নির্বাচনের আগে অনিয়ম রোধে বিশেষ করে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, মন্ত্রিপরিষদসচিবকে এ ধরনের চিঠি দেওয়া নিয়মিত বিষয়। আগেও এ ধরনের চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইসি আশা করে, সংশ্লিষ্ট সবার যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নির্বাচনে সহিংসতা অনেক কমে আসবে।
পুলিশ কর্মকর্তাদেরও ইউপি নির্বাচনে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন এবং কোনো রকম হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা যাতে না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।