আফজাল খান মানবিকতার সকল গুণে গুণান্বিত ছিলেন: মোকতাদির চৌধুরী

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, আফজাল খানকে এই কুমিল্লার মেয়র বানানোর জন্য আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী করা হয়েছিল, আমি তাঁর পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য ঘরে ঘরে গিয়েছি, কথা বলেছি, কিন্তু কষ্টটা হলো কুমিল্লার মানুষ- আপনারা আজকে যেভাবে তাঁর স্মরণে সমবেত হয়েছেন, সেই সময় যদি মতো সকলে মিলে তাকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করতে পারতাম তাহলে কুমিল্লা শহরের চেহারা আরও অনেক বেশি পাল্টে যেত। কারণ একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক মানুষের দ্বারা যে কাজ করা সম্ভব, যাদের ভেতরে দেশপ্রেম নাই তাদের দ্বারা সে কাজ যে হয় না কুমিল্লাতে যদি আপনারা এখনও হাড়ে হাড়ে বুঝে না থাকেন তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো আপনারা বুঝবেন। আফজাল খান সাহেবের অভাব অপূরণীয়, তিনি সকল মানবিকতার গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ ছিলেন।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) কুমিল্লায় ‘হৃদয়ে স্মরণে স্মৃতিতে ভালোবাসায় অধ্যক্ষ আফজাল খান নাগরিক শোক সমাবেশ’-এ অংশগ্রহণ করে তিনি এসব কথা বলেন।

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, এই নাগরিক সমাবেশে আমার অংশগ্রহণের অন্যতম কারণ হলো- আফজাল খানের স্মরণ সভায় অংশগ্রহণ করা, তার সম্পর্কে কিছু বলা; এইটার দ্বারা আমার উপরে যে তাঁর স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা আছে তার কৃয়দঅংশ হলেও আমি স্মরণ করব।

তিনি বলেন, আমি যখন মনে করি এক মানবিক আফজাল খানের চেহারা, তখন মনে পড়ে এমনি এক ডিসেম্বর মাসের স্মৃতি। সেসময় আমি কুমিল্লার অদূরে একটা রোড এক্সিডেন্টে আহত হয়ে ছিলাম, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো। যখন আমার সন্দেহ হচ্ছিল আমার ডান চোখটা বেঁচে আছে কিনা, সেসময়ে আফজাল খান সাহেবকে খবর দেওয়ার পরে তিনি হাসপাতালে এলেন এবং ফজরের আযান যখন পড়ে তখন আমার অপারেশন সম্পন্ন হয়েছিল এবং আমি চোখ খুলে যাকে প্রথম দেখেছিলাম তিনি শ্রদ্ধেয় বড় ভাই, অভিভাবক ও নেতা জনাব আফজাল খান। সুতরাং একজন মানবিক আফজাল খানের কথা না বলে তো পারছি না। একই সাথে আমি আজকে শুধু আমার ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা বলব না, আমি আপনাদের সকলের সামনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

মোকতাদির চৌধুরী আরও বলেন, একাত্তরের মুক্তির সংগ্রামে তিনি (আফজাল খান) ছিলেন। ৬২ ছাত্রআন্দোলনের সময় তিনি স্কুল ছাত্র থাকা অবস্থায় অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন। ছেষট্টির ৬দফা আন্দোলনে তিনি ছিলেন, ৬৯এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি ছিলেন, ৭০-এর নির্বাচনে তিনি ছিলেন; আর একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদেরকে সংগঠিত করে সশস্ত্র সংগ্রামে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং আমাদেরকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছিলেন।

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোকতাদির চৌধুরী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, স্বাধীন করেছো এই দেশ, এবার দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে; সেজন্য আমি সোনার মানুষ চাই। সোনার মানুষ গড়ার জন্য এক নম্বর শর্ত হলো শিক্ষা। আফজাল খান সাহেব শুধু যুদ্ধ করেননি, শুধু রাজপথে আন্দোলন করেননি, এই কুমিল্লাবাসীকে, এই বাংলাদেশের লোকেদেরকে সুশিক্ষিত করে ভবিষ্যতের জন্য সুযোগ্য করে, দেশটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে গিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, আমরা কিন্তু অনেক সময় মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়ায় না; আমরা মনে করি- রাজনীতি মানে স্লোগান, রাজনীতি মানে নিজেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করা, আর রাজনীতি মানে পদ-পদবীর জন্য লড়াই করা। কিন্তু সমাজের দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, সমাজের দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসাও যে রাজনীতির একটা অংশ সেটিও যে সমাজনীতির একটা অংশ, সেটিও যে দেশপ্রেমের অংশ সেই কথাটা আফজাল খান সাহেব আমাদেরকে দেখিয়ে গিয়েছেন। তিনি বহু সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

শেয়ার করুন