লঞ্চে আগুন: ৪ মালিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

যাত্রীবাহী লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
সংগৃহীত ছবি

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০–এ আগুনে পুড়ে প্রাণহানির ঘটনায় লঞ্চের ৪ মালিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার নৌ আদালত।

আজ রোববার বিকালে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন নৌ আদালতের বিচারক (স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) জয়নাব বেগম।

নৌ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বেল্লাল হোসাইন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- লঞ্চের মালিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আল আরাফ অ্যান্ড কোম্পানির চার মালিক মো. হামজালাল শেখ, মো. শামিম আহম্মেদ, মো. রাসেল আহাম্মেদ ও ফেরদৌস হাসান রাব্বি, লঞ্চের ইনচার্জ মাস্টার মো. রিয়াজ সিকদার, ইনচার্জ চালক মো. মাসুম বিল্লাহ, দ্বিতীয় মাস্টার মো. খলিলুর রহমান ও দ্বিতীয় চালক আবুল কালাম।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। ঢাকা থেকে প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি বরগুনা যাচ্ছিল। আগুনে পুড়ে ও নদীতে ঝাঁপ দিয়ে অন্তত ৪১ যাত্রী নিহত হন। এখনো ৫১ যাত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ওই আগুনের ঘটনায় আজ দুপুরে নৌপরিবহন অধিদপ্তরে অবস্থিত নৌ আদালতে মামলা করেন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান। বিকালে মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে লঞ্চে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র না থাকা, জীবন রক্ষাকারী পর্যাপ্ত বয়া ও বালুর বাক্স না থাকা, ইঞ্জিন কক্ষের বাইরে অননুমোদিতভাবে ডিজেলবোঝাই অনেক ড্রাম রাখা এবং রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার বাদী অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান বলেন, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ ঘটনায় মৃত্যুজনিত দায় নির্ধারণ করে সম্পূরক মামলা করা হবে।

এদিকে, দুর্ঘটনার মামলা হওয়ায় আইন অনুযায়ী আজ রবিবারই অভিযান-১০ লঞ্চের ফিটনেস সনদ, নিবন্ধন ও মাস্টার-চালকদের সনদ স্থগিত করা হবে বলে নৌপরিবহন অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় রবিবার সকালেও একটি মামলা হয়েছে। মামলায় লঞ্চের মালিক হাম জালাল শেখসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম নাসির রবিবার সকাল ৯টায় আবেদন করলে আদালত পুলিশকে মামলাটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেয়।

‘লঞ্চে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কার্যকর ছিল না’

অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কার্যকর ছিল না বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে যেটা বলতে পারি, এই লঞ্চের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা তেমন কার্যকর ছিল না এবং যারা দায়িত্বে ছিল, তারা এটা ম্যানেজ করতে পারেনি।”

অনুমোদনহীন রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিনে চলছিল লঞ্চটি

একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ নামে যে লঞ্চটিতে আগুন লাগে সেটি রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন দিয়ে চলছিল৷ এর আগের ইঞ্জিনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর গত অক্টোবর মাসে এই ইঞ্জিনটি লাগানো হয়৷

তবে বিষয়টি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআইডব্লিউটিএকে জানানো হয়নি বলে দাবি কর্তৃপক্ষের৷ আর দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ইঞ্জিন বিস্ফোরণে লঞ্চটিতে আগুন লাগে৷ বিআইডব্লিউটিএ’র ইঞ্জিনিয়ার ও শিপ সার্ভেয়ার মো. মাহবুবুর রশিদ বলেন, ‘নৌযানে নতুন এবং রিকন্ডিশন্ড উভয় ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করা যায়৷ তবে আমাদের (কর্তৃপক্ষের) অনুমোদন নিতে হবে৷ সাধারণত বড় লঞ্চে আমরা নতুন এবং ছোট লঞ্চে রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিনের অনুমতি দিই৷ তবে পুরোনো ইঞ্জিন ব্যবহার করতে হলে তার ইনস্টলেশন আমরা ঠিক করে দিই৷ তা না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেই লঞ্চটিতে আগুন লেগেছে আমরা জেনেছি তাতে সম্প্রতি রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিল৷ এবং তা ছিল অনুমোদিত হর্সপাওয়ারের চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন৷ আর এটা আমাদের অনুমোদন ছাড়াই লাগানো হয়৷ রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন ঠিকমত ইনস্টলেশন না হলে তা থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়৷ যার ফলে আগুন লেগে যেতে পারে৷ এক্ষেত্রেও তাই ঘটে থাকতে পারে৷ তবে তদন্ত শেষ হলেই আগুনের আসল কারণ জানা যাবে৷’

শেয়ার করুন