শিক্ষার্থীদের ৪ ঘণ্টা ধরে যুদ্ধের বীরত্বগাঁথা শোনালেন মোকতাদির চৌধুরী এমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী একাধারে বীর মুক্তিযোদ্ধাও। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ১৯৭১ সালের বীরত্বগাথা তিনি শুনিয়েছেন চার ঘণ্টা ধরে।

শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘বীরের মুখে মুক্তিযুদ্ধের বীরগাঁথা শোনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন সময়কার গল্প শোনান।

universel cardiac hospital

মোকতাদির চৌধুরী বলেন, একদিন টাঙ্গাইল যাওয়ার জন্য রওনা হই। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাকে কোনো পরিবহনেই ভাড়া পরিশোধ করতে হয়নি। গাড়ি, রিকশা এমনকি নৌকা ভাড়া পর্যন্ত দিতে হয়নি। সবাই সহযোগিতা করেছে। ঐ সময় পাকিস্তান আর্মির একটা জীপ আমার সামনে এসে থামল। আমাকে জিগ্যাসা করল ‘মৌলভী কাহা যায়েগা আপ?’ আমি উর্দুতে বললাম আমার বাবা-মা আমার বোনের খোঁজ নিতে পাঠিয়েছে। মাদরাসায় পড়ার সুবাদে উর্দুটা জানা ছিল। তখন তারা আমাকে গাড়িতে উঠতে বলল, আমি কোন কথা না বলে গাড়ির পেছনের সীটে বসি। ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ এমন একটি চিরকুট আমার পকেটে ছিল। কৌশলে চিরকুটটা হাতে ঢলে মুখে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেললাম, ফেলার কোন উপায় নেই। ময়মনসিংহের কাছাকাছি পৌঁছে আমি উর্দুতে বললাম, হাম নামাজ পড়েঙ্গা, বাদমে হাম মেরী বহিনাকো ডুনডোঙ্গে। একথা শুনে তারা আমাকে এক বড় মসজিদের সামনে নামিয়ে দিল।

যুদ্ধের সময়কার স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অক্টোবর মাসে পাক বাহিনীর ক্যাম্পে হানা দেওয়ার জন্য বেড়তলা থেকে লালপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক হয়ে নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বটতলি আসার পর হামলার শিকার হই। কারণ পাক বাহিনী আগে থেকেই আমাদের আসার খবরটি জেনে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় আহত হয়ে প্রথম দিন মজলিশপুর, দ্বিতীয় দিন রাতে পারেঙ্গাবাড়ি থেকে ভারতে যাই। সেখানে প্রথমে জিবি হাসপাতালে পরে বারাকপুর কম্বাইন্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসা গ্রহণ করি। পরবর্তীতে বর্তমান বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সর্বশেষ চিকিৎসা গ্রহণ করি।

তিনি বলেন, মুষ্টিমেয় কিছু লোকজন ছাড়া প্রায় সকল মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। এমনকি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ রাজাকার কমান্ডার আমাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছিল। তবে কওমি মাদ্রাসার কেউ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ছিল না।

মোকতাদির চৌধুরী তাঁর দীর্ঘ আলোচনায় স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রেক্ষিত, স্বাধীনতাযুদ্ধে জাতির জনকের অবদানসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। স্বাধীনতার ডাক দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেটা সরাসরি শুনতে পেলে নিজেকে গর্বিত বলে উল্লেখ করেন মোকতাদির এমপি।

অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি, সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজমীন।

বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহবুব ও শাওন বলে, এত দিন ভাবতাম পাঠ্য বইয়ে যা আছে সেটাই বুঝি মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে সরাসরি গল্প শুনে মনে হলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনেক বড়। এর মধ্য দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরো অনেক বেশি জানতে পারলাম। নিয়মিত এ ধরনের আয়োজন হলে আমরা উপকৃত হব।

বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজমীন বলেন, বর্তমান প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আরো বেশি ছড়িয়ে দিতে আমাদের এ আয়োজন। বিদ্যালয়ের আরেকটি অনুষ্ঠানে এসে এমপি মহোদয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বললে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হয়ে ওঠে।

শেয়ার করুন