মুজিব উদ্যানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফেনীর আলোচিত রাজনীতিক জয়নাল আবেদীন হাজারী। মঙ্গলবার সকালে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জয়নাল হাজারীর প্রথম জানাজা হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টায় ফেনী সরকারি হাইস্কুল মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে শহরের নিজ বাসভবন চত্বরে মুজিব উদ্যানের বকুলতলায় তাকে দাফন করা হয়।
দুপুর আড়াইটার দিকে জয়নাল হাজারীর মরদেহ বহনকারী গাড়ি ফেনী পৌর শহরের মাস্টারপাড়া হাজারী বাড়িতে পৌঁছায়। এর ১০ মিনিট পর মরদেহ তার বাসভবন মুজিব উদ্যানে নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় ফেনী সরকারি পাইলট হাইস্কুল মাঠে জয়নাল হাজারীর মরদেহ এসে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ হাজারো মানুষ তাকে এক নজর দেখতে সেখানে ভিড় করেন। বিকেল সাড়ে চারটায় পাইলট হাইস্কুল মাঠ হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
জানাজায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খুরশিদ আলম সুজন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সায়ীদ আল মাহমুদ স্বপন, ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। জানাজা পড়ান জয়নাল হাজারীর উদ্যোগে নির্মিত মসজিদের ঈমাম হাফেজ মিজানুর রহমান। জানাজায় ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল, ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, দাগনভূঁইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীম,পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহামুদুল হাসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন প্রমুখসহ ৬ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
এর আগে সকাল ১০টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জয়নাল আবেদীন হাজারীকে শেষ বিদায় জানায় ঢাকাবাসী। তার মরদেহ বহনকারী গাড়ি রওয়ানা দেয় ফেনীর উদ্দেশ্যে। সঙ্গে ছিল বহরও।
জয়নাল হাজারী সোমবার রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি ও ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
জয়নাল হাজারী ১৯৮৪-২০০৪ পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ফেনীতে ‘ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করেছিলেন তিনি। সে সময় ফেনীতে তার কর্মকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দেয়। সমালোচিত হয় তার দল আওয়ামী লীগও।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক ও নিজ দলের বিরোধীদের ওপর নির্যাতন চালান জয়নাল হাজারী। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই বছর ১৭ অক্টোবর রাতে ফেনী শহরের মাস্টার পাড়ায় তার বাসভবনে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। সে সময় পালিয়ে ভারতে চলে যান তিনি। পলাতক থাকা অবস্থায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে দেশে ফেরেন জয়নাল হাজারী। পরে আবার তাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং ২০১৯ সালে তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীতে স্থান দেওয়া হয়। প্রবীণ এ আওয়ামী লীগ নেতা চিরকুমার ছিলেন।