ইউরোপ-আমেরিকায় ওমিক্রনের ঢেউ, বাংলাদেশেও বাড়ছে সংক্রমণ

ডেস্ক রিপোর্ট

ওমিক্রন
ফাইল ছবি

করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এপর্যন্ত একদিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় এই ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে। বিশ্বজুড়ে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের অব্যাহত বিস্তার নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ ৪০ হাজার নতুন সংক্রমণ শনাক্ত করার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। অন্যদিকে ফ্রান্স, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল এবং ইংল্যান্ডেও সোমবার রেকর্ড সংখ্যায় নতুন সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়।

কর্মকর্তারাদের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, ক্রিসমাসের ছুটির কারণে কোভিড সংক্রমণের তথ্য আসতে দেরি হচ্ছে, সোমবার রেকর্ড সংখ্যায় নতুন সংক্রমণের তথ্য এসে পৌঁছানোর কারণ হয়তো সেটি।

বিভিন্ন গবেষণায় অবশ্য বলা হচ্ছ, এর আগের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন অনেক দুর্বল। কিন্তু তারপরও আশংকা থেকে যাচ্ছে, যেরকম হারে অমিক্রন সংক্রমণ ঘটছে, তাতে হাসপাতালগুলো রোগীর চাপে হিমসিম খেতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, ওমিক্রন এখনো এক মারাত্মক ঝুঁকি।

পোল্যান্ডে বুধবারের হিসাবে একদিনে কোভিড সংক্রান্ত কারণে ৭৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোভিডের চতুর্থ ঢেউয়ে সেদেশে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা। যারা মারা গেছে, তাদের তিন চতুর্থাংশেরও বেশি কোনো টিকা নেয়নি।

বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, ২৭ ডিসেম্বর সেদেশে পরীক্ষায় কোভিডে শনাক্ত মানুষের সংখ্যা আরও চার লাখ ৪১ হাজার ২৭৮ জন বেড়েছে। এটি সিডিসির হিসেবে এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা।

সিডিসির একটি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, মার্কিন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত সাত দিনের গড় হিসাব করলে, প্রতিদিন যত মানুষের কোভিড ধরা পড়েছে, এত বেশি এ বছরের জানুয়ারীর পর আর দেখা যায়নি।

তবে সিডিসির একজন মুখপাত্র বলছেন, সংক্রমণের যে সর্বশেষ সংখ্যা অনুমান করা হচ্ছে, তা হয়তো আসল সংক্রমণের চেয়ে বেশি, কারণ ক্রিসমাসের সময় অনেক পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ ছিল। আর ছুটির কারণে অনেক তথ্য দেরিতে এসে পৌঁছাচ্ছে। নতুন বছরে হয়তো এই সংখ্যা স্থিতিশীল হয়ে আসবে।

যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউরোপের আরও কিছু দেশের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মল্টা, মোলডোভা এবং সুইডেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মঙ্গলবার এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে ইউরোপে ২৬ ডিসেম্বরের আগের সপ্তাহে কোভিডের সব ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ৫৭ শতাংশ বেড়েছে, আর আমেরিকায় বেড়েছে ৩০ শতাংশ।

মঙ্গলবার ফ্রান্স জানিয়েছে সেদেশে একদিনে সর্বোচ্চ এক লাখ ৭৯ হাজার ৮০৭টি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, জানুয়ারির শুরুর দিকে ফ্রান্সে দৈনিক সংক্রমণ আড়াই লাখে পৌঁছাতে পারে।

ফ্রান্সের হাসপাতালগুলের ফেডারেশন বলেছে, সবচেয়ে খারাপ সময়টা হয়তো এখনো আসার বাকি আছে।

বাংলাদেশেও বাড়ছে ওমিক্রনের সংক্রমণ

এদিকে বাংলাদেশেও বাড়ছে ওমিক্রন সংক্রমণের সংখ্যা। মঙ্গলবার দেশে আরও তিনজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়। এ নিয়ে দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতজনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন শনাক্ত তিনজন রাজধানীর বনানী এলাকার বাসিন্দা। তাদের দুজন নারী, একজন পুরুষ। নারীদের একজনের বয়স ৩০ বছর, আরেকজনের ৪৭। আর ওমিক্রন শনাক্ত পুরুষের বয়স ৮৪ বছর।

গত ২৩ ডিসেম্বর সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর ওই তিনজনের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। পরে জিনোম সিকোয়েন্স বের করে জানা যায়, তাদের শরীরে করোনা শনাক্ত হয় আর ওই ধরনটি ওমিক্রন।

এর আগে মঙ্গলবার আরও একজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার খবর দেয় জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (জিআইএসএআইডি)আক্রান্ত ওই ব্যক্তি একজন পুরুষ। তার শরীর থেকে পাওয়া ভাইরাসের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছিল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।

এছাড়া সোমবারও ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভ (আইদেশি) ওমিক্রনে আক্রান্ত আরেকজনের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স জিআইএসএআইডিতে প্রকাশ করে। তিনি একজন নারী।

এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের দুজনের শরীরে করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রন শনাক্ত হয়।

এদিকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে গেলেও দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ গত কয়েক দিন ধরে অব্যাহতভাবে বাড়ছে। শনাক্তের সংখ্যা এক অংকের ঘরের কাছাকাছি চলে গেলেও তা বেড়ে এখন ৫০০ ছুঁইছুঁই করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে ৪৯৫ জনের শরীরে। উল্লিখিত সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন।

শেয়ার করুন