বিদায় ২০২১ : যাক ভেসে যাক জীর্ণ পুরাতন

সৈয়দা রাকীবা ঐশী

বিদায় ও স্বাগতম
ফাইল ছবি

করোনা মহামারির আতঙ্ক নিয়ে আগের বছরের মতোই ২০২১ সালটাও কেটেছে। বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় কেটেছে চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণসহ নানা ধরনের বিধি-নিষেধের মধ্যে। বছরের শেষ দিকে এসে খুলে যায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। খোলা বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয় নানা বয়সের শিক্ষার্থীরা। করোনার হুমকি উপেক্ষা করে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল যে শিক্ষার্থীরা বছরের শেষ দুটি দিন তাদের কেটেছে হৈ-হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে। এবার ৯৩.৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।

২০২১ সালটি ছিল বহু কারণে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বছরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ হিসেবে উদযাপিত হয়েছে। একই সঙ্গে এই বছরটি উদযাপিত হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী হিসেবে। বছরটি ছিল বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীরও সুবর্ণ জয়ন্তী। একদা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো বাংলাদেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও শতবর্ষ উদযাপিত হয়েছে এ বছর।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে করোনা মহামারির ব্যাপক বিস্তারের মধ্যেও ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসেছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারী, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংসহ আরো অনেক বিশ্বনেতা। বছরের শেষে ৫০তম বিজয় দিবসে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ।

২০২১ সালটি আমাদের জন্য একটি বেদনারও বছর। অনেক প্রিয়জনকে হারিয়েছি আমরা এই এক বছরে। জাতীয় জীবনে অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করে বিদায় নিয়েছেন অনেক বিশিষ্টজন। তাঁদের মধ্যে আছেন—কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, ভাষাসংগ্রামী জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রমুখ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিদায় নিয়েছেন অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। তাঁদের মধ্যে আছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ডেসমন্ড টুটু, কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং প্রমুখ।

করোনার কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও কঠিন দুঃসময় পার করছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং বিভিন্ন খাতের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে মোট ২৮টি প্যাকেজের আওতায় এক লাখ ৩১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতা চলে গত বছরটিতেও। বিদায়ি বছরে পুঁজিবাজার কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে করোনার মধ্যেও ই-কমার্স যথেষ্ট জমে উঠেছিল। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের পর এই খাতটি বড় বিপর্যয় মোকাবেলা করছে। চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজসহ কিছু নিত্যপণ্যের বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা গেছে।

বিদায়ি বছরে বড় দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সারা দেশের মানুষকে শোকাবিভূত করেছিল। এর একটি ছিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, যাতে পুড়ে মারা গিয়েছিলেন ৫২ জন শ্রমিক। অন্যটি ছিল এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকাণ্ড, যাতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৭ জনের। অন্যদিকে গত এক বছরে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ অনেক উন্নয়নকাজের বাস্তব অগ্রগতিও দৃশ্যমান হয়েছে।

ভালো ও মন্দ মিলিয়ে ২০২১ বিদায় নিচ্ছে। আসছে ২০২২। নতুন বছর সবার প্রত্যাশা পূরণ করুক।

লেখক : শিক্ষার্থী

শেয়ার করুন