দেশে বিদেশি পর্যটক না আসার পেছনে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়াকে দায়ী করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতার পরে ২৮ বছর আওয়ামী ক্ষমতায় ছিল না। এরশাদ, জিয়া, খালেদা নিরবিচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় না থাকলেও আদর্শিকভাবে তারা এক ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পর্যটনের উন্নয়নে কিছুই করা হয়নি।
শনিবার (১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁও পর্যটন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসবকথা বলেন।
উবায়দুল মোকতাদির বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত কিছু উন্নয়ন হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজম অনেক বেড়েছে। সুযোগ-সুবিধা অনেক বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকায় এখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এবং সেটা চলমান থাকবে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ৫০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্নে মাত্র ৭টি বাণিজ্যিক ইউনিট নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের বর্তমান ইউনিট সংখ্যা ৫০টি। আরও বেশ কয়েকটি ইউনিট চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি জানান, বিগত ১২ বছরে প্রায় ২৮৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে পর্যটন করপোরেশন। এরই মধ্যে বাপক-এর বিদ্যমান ১০টি হোটেল-মোটেলের সংস্কার, ৮টি গাড়ি সংগ্রহ করা, কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় চেঞ্জিং ক্লোসেট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সংস্থার সকল বাণিজ্যিক ইউনিটকে ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনা হয়েছে। সিলেটের লালাখাল, কুমিল্লার জোড়কানন দিঘী, নাটোর, শেরপুরের গজনী ও নেত্রকোণা জেলার বিজয়পুরে পর্যটকদের সুবিধাদি সংবলিত সেবাকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এ সংস্থার বাণিজ্যিক ইউনিটসমূহে ডিজিটাল সাইনেজ এবং আইপি ক্যামেরা ও সাউন্ড সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়াও দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ৩৩৫ কোটি টাকার ১২টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চট্টগ্রামস্থ আনোয়ার উপজেলার পারকিতে পর্যটন সুবিধাদি প্রবর্তন, টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামীণ পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে গ্রামীণ পর্যটন উন্নয়ন এবং বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বাঘিয়াকূল নদীর স্টিমার ঘাটে পর্যটন সুবিধাদি সৃষ্টি, পঞ্চগড়ে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ, সুনামগঞ্জস্থ টেকেরঘাটে জলবায়ু সহিষ্ণু দায়িত্বশীল পর্যটন ব্যবস্থা প্রবর্তন, কক্সবাজার জেলার খুরুশকূলে শেখ হাসিনা টাওয়ার নির্মাণ এবং পর্যটন জোন স্থাপন সমীক্ষা প্রকল্প, বরিশালের দুর্গাসাগরে পর্যটন সুবিধাদি নির্মাণ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দায় শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন এলাকায় পর্যটন সুবধিাদি নির্মাণ, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ, দেশের অভ্যন্তরে প্যাকেজ ট্যুর চালু করার লক্ষ্যে ৬টি ট্যুরিস্ট বাস ক্রয়, নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার আদর্শনগরে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ ইত্যাদি। ১৯৭২ সাল থেকে দেশে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। জন্মলগ্ন থেকেই সংস্থাটি সরকারি বরাদ্দ ও নিজস্ব আয় থেকে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। পর্যটকদের কাছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য এবং মানসম্মত অতিথি সেবার বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন পথিকৃত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার অর্ধ-শতাব্দির অভিজ্ঞতা এবং সময়োপযোগী কর্মোদ্যোগের মাধ্যমে দেশের পর্যটন শিল্পকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে আগামীতেও নেতৃত্বের জায়গায় থেকে কাজ করবে মর্মে আমার বিশ্বাস।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব এ.এইচ.এম গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।